হাবিপ্রবি শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনও ৬১ শিক্ষকের ক্লাস বর্জন

দিনাজপুরের হাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ জন শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন

শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিকী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা। রবিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এ কর্মসূচি পালন করেন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া ৬১ জন শিক্ষক।

বেতন বৈষম্যের অবসান, বর্ধিত বেতন স্কেল বহাল ও নারী শিক্ষকসহ শিক্ষকদের ওপর হামলা প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের ওপর হামলার ইঙ্গিতদাতা প্রক্টর, ছাত্র ও পরামর্শ শাখার পরিচালক এবং রেজিস্ট্রারের বহিষ্কারের দাবি করেছেন।

শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের ওপর হামলাকারীদের বিচার ও নিয়ম অনুযায়ী বেতন দেওয়া না হলে এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামী সোমবারের মধ্যে দাবি মেনে না হলে মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে এ কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন রবিবার সকাল থেকে শিক্ষকরা সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, গত ১১ অক্টোবর রিজেন্ট বোর্ডের সভায় তাদের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই ৬১ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়া হলেও পদ অনুযায়ী বর্ধিত বেতন দেওয়া হচ্ছিল না। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ও কারণ জানতে গত বুধবার বিকেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রোজারার প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র হাওলাদারের কক্ষে যান। সেখানে কথা চলাকালীন সময় সিনিয়র শিক্ষকরা তাদের ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের করে দেয়। এরপর কিছু ছাত্র সিনিয়র শিক্ষকদের ইঙ্গিতে তাদের মারধর করে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনাসহ বর্ধিত বেতন দেওয়ার দাবিতে তারা সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপক ফাতিহা ফারহানা ও হাফিজ আল হোসেন জানান, তাদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও নিয়ম অনুযায়ী বর্ধিত বেতন দেওয়া হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইউজিসি’র নিষেধাজ্ঞা আছে বলে জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের পরে যারা পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের আবার বর্ধিত বেতন দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে তারা মধ্যে বেতন বৈষম্য শিকার হচ্ছেন। অনতিবিলম্বে এর সুরাহা না করা হলে আগামী রবিবার থেকে তারা বৃহৎ আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করবেন বলে ঘোষণা দেন।

শিক্ষকদের দাবি, তাদের ওপর হামলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. খালেদ হোসেন, ছাত্র ও পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. তরিকুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলমের ইঙ্গিতে। তাই এই তিন কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবি করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতৃত্বদানকারী সহকারী অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানান, যাদের মদদপুষ্ট হয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে তাদের অবশ্যই বিচার হওয়া প্রয়োজন, এটা শিক্ষকদের দাবি। ন্যায্য বেতন পাওয়া শিক্ষকদের অধিকার। সম্মান সম্মুন্নত রাখতে প্রয়োজনে জীবন দিবেন। শিক্ষকদের প্রতিকী কর্মসূচি আগামী সোমবার পর্যন্ত চলবে। এরমধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি হবে।

এদিকে ৬১ শিক্ষকের আন্দোলনের ব্যাপারে হাবিপ্রবি’র রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম জানান, সহকারী অধ্যাপকদের দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষকদের ওপর হামলার ব্যাপারে তিনি জানান, সহকারী অধ্যাপকদের ওপর কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং সহকারী শিক্ষকরাই সিনিয়র শিক্ষকদের ওপর তেড়ে আসেন এবং ধাক্কাধাক্কি করেন।