গাইবান্ধার অর্কা হোমে থাকে আলিফ হোসেন। ছয় বছর আগে রানা প্লাজা ধসের সময় তার বয়স ছিল ৯ বছর। দুর্ঘটনায় সে তার মাকে হারিয়েছে। তার মা দুলালী বেগম রানা প্লাজার চতুর্থ তলার একটি গার্মেন্টে অপারেটরের কাজ করতেন। মা’র কথা মনে হলেই এখনও ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে আলিফ। মায়ের ছবি বুকে নিয়েই অর্কা হোমে দিন কাটছে তার। আলিফের বাবা আছেন, কিন্তু মা হারানোর পর তার ঠাঁই হয়েছে হোমে। তার মতো স্বজন হারানো এমন ৪৮ শিশুর ঠাঁই হয়েছে অর্কা হোমে। এদের কারও মা নেই, কারও বাবা নেই। কারও কোনও স্বজনও নেই।
শ্রমিক পরিবারের অসহায় এসব শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের অ্যাসোসিয়েশন অর্কা (ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট অ্যাসোসিয়শেন) হোম তৈরি করে। ২০১৪ সালে প্রথমে চারজন শিশু নিয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ায় যাত্রা শুরু করে অর্কা হোম। বর্তমানে অর্কা হোমে ২০টি মেয়ে ও ২৮টি ছেলে শিশু রয়েছে। এরমধ্যে গাইবান্ধা জেলার দু’জন ছাড়া বাকিদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায়।
বাবা-মা হারানো দরিদ্র পরিবারের এসব শিশুর পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে হোমে। চাপা কান্না আর কষ্টকে সঙ্গী করে বেড়ে ওঠা এসব শিশুর স্বপ্ন মানুষ হওয়ার। তবে পাশাপাশি স্বজন হারানোর জন্য দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চায় তারা।
হোমে থাকা শিশুদের পড়ালেখা, খাওয়া, গোসল ও নামাজ পড়া সবই হয় একসঙ্গে। খেলাধুলা, বিনোদন এবং গল্পগুজব করে তাদের দিন কাটে। একই সূত্রে গাঁথা তাদের জীবন। তাদের স্বপ্ন লেখাপড়া করে কেউ চিকিৎসক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ হতে চায় সরকারি কর্মকর্তা। মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করতে চায় অনেকে।
এসব শিশুকে পরম যত্নে দেখাশুনা ও পড়ালেখাসহ লালন-পালন করতে অর্কা হোম কর্তৃপক্ষ দু’জন কেয়ারটেকার রেখেছে। কেয়ারটেকার নূরজাহান বেগম বলেন, ‘অসহায় শিশুদের পাশে সার্বক্ষণিক থাকি। তাদের দেখাশোনা, সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ সবকিছুই ভাগ করে নেই আমি।’ স্বজনহারা এসব শিশু একদিন মানুষ হবে, এই প্রত্যাশায় তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে গাইবান্ধা জেলার অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। এখনও নিখোঁজ ১৫ জন।
আরও পড়ুন:
রানা প্লাজা দুর্ঘটনা: এখনও ঝুলছে ৩ মামলার বিচার
কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!