হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, হাকিমপুর উপজেলায় বোরো ধানের চাষাবাদ কমেছে। চলতি বছরে হাকিমপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান ও ৫ হাজার ৯৫৭ হেক্টর জমিতে উফশি জাতের ধান চাষ করা হয়। হাইব্রিড ও উফশি জাত মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৯ হাজার ৮৪৯ মেট্রিকটন। আর গত বছর ৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ধান থেকে ৩০ হাজার ৭৩ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল।
হিলির জালালপুর এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারছি না। প্রতিবছরই লোকসানের মাত্রা বাড়ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ধান রোপণ, পরিচর্যা, সার কীটনাশক ও পানি দেওয়াসহ সব খরচ মিলিয়ে ধান উৎপাদন করতে আমাদের যে টাকা গুনতে হচ্ছে, সে তুলনায় দাম পাচ্ছি না। প্রতিবছর উৎপাদন খরচ বাড়লেও দাম বাড়ার পরিবর্তে কমছে। মাঝখানে ধানের দাম একটু বেড়ে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা উঠলেও পরে আবার তা কমে সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় নেমে আসে। এতে করে কৃষকরা লোকসানের মধ্যে পড়ছেন, বিশেষ করে যেসব কৃষক বর্গা চাষ করেন তারা বেশি লোকসানে পড়েছেন।
হিলির জালালপুর গ্রামের কৃষক সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিবিঘা জমিতে ১৮ থেকে ২০ মন করে ধান পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ধানের ফলন ভালো হলেও আমাদের কোনও লাভ হচ্ছে না, কারণ ধানের তো দাম নেই। বীজতলা থেকে শুরু করে, ধান লাগানো, সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার, কীটনাশক প্রয়োগ, পানিসহ ধান কাটা মাড়াই পর্যন্ত এক মণ ধানে কৃষকের উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮০০ টাকার মতো। আর প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা দরে, তারপরেও কেউ ধান নিতে চাচ্ছে না। এতে করে প্রতিমণ ধানে দুই-তিনশ’ টাকার মতো লোকসান গুণতে হচ্ছে।
অপর এক কৃষক বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটার মজুরি বেড়ে গেছে। বর্তমানে একজন শ্রমিককে ধান কাটা বাবদ দুবেলা খাবারসহ দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। সেইসঙ্গে মাড়াইয়ের খরচ তো রয়েছেই। সরকার এবার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ধান কেনা শুরু হয়নি। সরকার যদি ধান কেনে তাহলে কৃষকরা বাঁচতো।
হিলির ছাতনি গ্রামের বর্গাচাষী লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ধান চাষ করে লাভবানের আশায় মৌসুমের শুরুতে প্রতি বিঘাতে ১০০০ টাকা হিসেবে ৬ মণ ধানের হিসেবে ৬০০০ টাকা করে অগ্রিম পরিশোধ করে জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়েছি। তার পরে বিভিন্ন দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাভের উপর টাকা নিয়ে ধানের আবাদ করেছি। কিন্তু বর্তমানে ধানের যে দাম তাতে করে সবকিছু দিয়ে লাভের আশা তো দূরে থাক, উল্টো আমাদের ঋণ পরিশোধের চিন্তায় হতাশার মধ্যে আছি।
এ অবস্থায় এক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, ‘এমন অবস্থা হয়েছে যে, এক মণ ধান বেচেও এক কেজি খাসির গোশত কেনা যাচ্ছে না।’
এ অবস্থায় কৃষকরা দাবি জানিয়েছেন, সরকার যেন ধানের দাম বাড়ানোর ব্যবস্থা করে ও কৃষকদের থেকে সরাসরি ধান কেনে। এতে অন্তত কৃষকরা ধান চাষাবাদ করে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা নাজনীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চলতি মৌসুমে হাকিমপুর উপজেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩২৫ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়। কারণ ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে ভুট্টাসহ অন্য অর্থকরী ফসলের দিকে ঝুঁকছেন।