মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্রমাগত লোকসানের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, গুদামে অবিক্রিত অবস্থায় ৪ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন চিনি পড়ে আছে। চিনি অবিক্রিত থাকায় কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে। তবে ঈদের আগেই বকেয়া বেতন-মজুরি পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিলের শ্রমিক আতোয়ার রহমান বলেন,‘চিনি বিক্রি হচ্ছে না এমন অজুহাতে কর্তৃপক্ষ চার মাস ধরে তাদের বেতন-মজুরির টাকা দিচ্ছে না। এতে তাদের চরম আর্থিক কষ্টে পড়তে হয়েছে। টাকার অভাবে ঠিকভাবে সংসার চালাতে পারছেন না। তাছাড়া ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচও দিতে পারছে না। এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে কী করবেন, সেই ভাবনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।
আবদুর রহমান নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মিল চালুর সময় বেতন বকেয়া পড়ে চার মাসের। পরে চিনি বিক্রি করে সেই চার মাসের বেতন দেওয়া হলেও ১৬ থেকে ২০ পারসেন্ট টাকা কেটে রাখে মিল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে আবারও চার মাসের বেতন ও মজুরি বকেয়া পড়েছে। একারণে আমাদেরকে দুর্বিসহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে।’
শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ফটু নেতা বলেন, ‘চার মাসে সাড়ে চার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন হিসেবে প্রায় ৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ঈদের বোনাসসহ পাওনা টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ছয় কোটির ওপরে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ অবস্থা চললে ঈদের আগে শ্রমিক-কর্মচারীদের যে অবস্থা হবে, ভাবা যায় না।’ ঈদের আগেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-মজুরি পরিশোধের দাবিও জানান তিনি।
এদিকে, শুধু শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-মজুরি নয়, মিলের আওতায় আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। এজন্য মিল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকেই দায়ী করেন চাষিরা। মিলের আওতাধীন মহিমাগঞ্জের চাষি আনারুল ইসলাম বলেন, ‘মিলে আখ দিয়েও টাকা পাচ্ছে না তারা। নানা অজুহাতে টাকা দিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। সময় মতো টাকা না পাওয়ায় অনেকেই আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ।’
এ বিষয়ে মিলের ব্যস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘মিলের গুদামে গত বছর ও এ বছরের উৎপাদিত চিনি অবিক্রিত অবস্থায় রয়েছে। এই চিনি বিক্রি করতে পারলে কোনও সমস্যা হতো না। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ঈদের আগেই অবিক্রিত চিনি বিক্রির চেষ্টা চলছে। চিনিগুলো বিক্রি করা সম্ভব হলেই শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-মজুরিপরিশোধ করা হবে।’
১৯৫৪ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ১৯২৫ একর জমিতে গড়ে উঠে মহিমাগঞ্জ চিনিকলটি। ১৫০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের ধারণ ক্ষমতা নিয়ে মিলটির প্রথম মাড়াই মৌসুম শুরু হয় ১৯৫৮ সালে। মিলটিতে নিয়মিত ও মৌসুম ভিক্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮৫০ জন। তবে শুরু থেকে এ পর্যন্ত চিনিকলটি দুই-একবার লাভের মুখ দেখলেও বরাবরই লোকসানের মুখে রয়েছে এই চিনিকলটি।