জেলায় চলতি বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান ওঠার সময় বিআর-২৮ ধানের দাম ছিল মণ প্রতি ৪৫০-৫০০ টাকা। বর্তমানে দাম একটু বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬৫০ টাকায়। তবে এই লাভ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বোরো আবাদ করে ঘরে তোলার সময় ঋণ পরিশোধ, সার,বীজ ও সেচের টাকা ধান বিক্রি করে পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। এতে প্রতি বিঘায় তারা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনছেন।
গত কয়েক বছর ধরে ধান আবাদে লোকসান হওয়ায় কৃষক পাটসহ সবজি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন। যে কারণে গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে জেলা কৃষি বিভাগের ১০ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হাড়োয়া শিমুলবাড়ী গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলামের জমিতে চাষ করেছেন শসা, লাউ, করলা, চিচিঙ্গা, কাকরোল, জালি কুমড়া ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি।
কৃষকরা জানান, বর্তমানে বাজার দর অনুযায়ী ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠানো সম্ভব নয়। ধানের এই দর প্রভাব ফেলেছে আমন উৎপাদনের ওপর। যে কারণে কৃষকরা ধান চাষে উৎসাহ হারিয়েছেন। এর পরিবর্তে তারা সবজি ও পাট চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
জলঢাকার কৃষক হামের উল্লা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে তাদের লোকসান হচ্ছে।
একই এলাকার ভুবেন্দ্র নাথ রায় বলেন, প্রতি বছরেই লোকসানের মাত্রা বাড়ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে, ধান রোপণ, নিড়ানী, সার, কীটনাশক ও সেচসহ ধান উৎপাদনে যে টাকা খরচ হয়েছে, সে তুলনায় দাম পাচ্ছি না। প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাড়লেও আশানরূপ বাজার মূল্য পাওয়া যায় না। ফলে কৃষককে প্রত্যেক মৌসুমেই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, বর্তমানে সবজি ও পাট চাষ খুবই লাভজনক। ধান চাষ করে লাভ করা যাবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। এলাকায় মাঠে মাঠে এখন পাট আর হরেক রকমের সবজি ক্ষেতের সমাহার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালাম আযাদ বলেন, কৃষক ধান চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এটা সঠিক নয়। প্রতি বছর ধানের দাম নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথা হলেও সময়মতো তারা ধান চাষের সব প্রস্ততি নেয়। এর একমাত্র কারণ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ধান আবাদ থেকে বিরত থাকতে পারে না কেউ। পাট কাটার পর ওই জমিতে কৃষক ঠিকই আমন চাষ করবেন। এ ব্যাপারে চিন্তার কারণ নেই।