কুড়িগ্রামে নদীতে বাড়ছে পানি, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

পানিবন্দি পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। শুক্রবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  অব্যাহত পানি বাড়ায় ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

নিম্নাঞ্চল প্লাবিতএছাড়া জেলার রৌমারী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে চলছে নদী ভাঙন। ভাঙনের কবল থেকে বাঁচাতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয়রা জানান,পানি বেড়ে রৌমারী উপজেলার বলদমারা ঘাটের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী বাগুয়ারচর এলাকার পাকা রাস্তার প্রায় ৩০০ মিটার তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়তলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সদর ইউনিয়নের বড় মাদারটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

পানি বাড়ায় ভাঙছে নদীর পাড়এদিকে, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের চুলিয়ারচর, যাদুরচর ইউনিয়নের বকবান্দা ও বন্দবের ইউনিয়নের বাগুয়ারচর এলাকায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

ভাঙনের কবলে পড়ে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কর্তিমারি এলাকার ধনারচর নতুন গ্রাম বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধ ভেঙে গেলে ওই এলাকা প্লাবিত হয়ে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হওয়ার পাশাপাশি রৌমারী-ঢাকা মহাসড়ক ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পানি বাড়ায় ভাঙছে নদীর পাড়ধনারচর নতুন গ্রাম বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে জানিয়ে যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সরবেশ আলী জানান, তার ইউনিয়নের দক্ষিণ আলগারচর, উত্তর আলগারচর, খেওয়ার চর, বকবান্দা নামাপাড়া, বকবান্দা ব্যাপারিপাড়া, চরলালকুরাসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে ২০টিরও বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

এদিকে, শুক্রবার দুপুরে বন্দবের ইউনিয়নের বাগুয়ারচর এলাকায় নদী ভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ওই এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের পাশাপাশি নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্লাবিত অঞ্চলশুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘আমরা জরুরিভাবে মোট ৫০টি পরিবারকে সরিয়ে নিচ্ছি। এই পরিবারগুলোকে ঢেউটিন, খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। পাশাপাশি মানুষের ভিটেমাটি, বসতঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে।’

নদীতে বড়ছে পানিরৌমারীতে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রৌমারীতে বেশ কিছু এলাকা নদী ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। নদী ভাঙন রোধে কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেলেও বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা স্থায়ী কোনও প্রতিকার করতে পারছি না।’

এই প্রকৌশলী আরও বলেন,‘আমি ধনারচর নতুন গ্রাম বেড়িবাঁধ এলাকা পরিদর্শন করেছি। নদী ভাঙনে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তাতে রৌমারী-ঢাকা মহাসড়কের কোনও সমস্যা হবে না।’