রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে বিট্রিশ আমলে দক্ষ জনবল হিসেবে হাজার হাজার মানুষকে ভারতের বিহার রাজ্য থেকে আনা হয় এ জেলায়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এবং ৭১-এর পরও তারা বংশ পরম্পরায় সৈয়দপুর শহরে রয়ে যান। ঐতিহ্য অনুযায়ীও তাদের কাছে আশুরার গুরুত্ব অনেক। তাদের মধ্যে শিয়া, সুন্নি উভয় মতের অনুসারী থাকায় অনুষ্ঠান উদযাপনের তরিকাতেও রয়েছে ভিন্নতা।
আশুরা উপলক্ষে সেখানে শহরজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হয় বড় বড় তোরণ। আলোকসজ্জা করা হয় হরেক রকমের বাতিতে। আলাদাভাবে ঈমামবাড়ায় ইমাম হোসেনের মাজারকে স্মরণ করে মিনারের মতো তাজিয়া নির্মাণ করা হয়। সেখানেও করা হয় আলোকসজ্জা। তালে তালে বাজানো হয় ড্রাম।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় চলে ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, তলোয়ার ও আগুনের বিভিন্ন ধরনের খেলা। শহরের গোলাহাট থেকে শোভাযাত্রা ও মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সবার পরনে ছিল কালো রংয়ের পোশাক। ঢোলের তালে তালে দুহাত দিয়ে সজোরে বুকে আঘাত করে। একই সঙ্গে মুখে উচ্চারিত হয় ‘ইয়া হোসেন, ইয়া হোসেন’। কেউবা অঝোর নয়নে কাঁদেন আর ইমাম হোসেনের মৃত্যর স্মরণে মাতম গীত গাইতে থাকে।
ঈমামবাড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু (৫৫) বলেন, ‘আলোচনা ও দোয়া মাহফিল শেষে প্রিয় নবী (সা.) এর দৌহিত্র হাসান ও হোসেন (রা.) এর জীবনী আলোচনা করে তাদের রেখে যাওয়া পথ অনুসরণের মাধ্যমে মুসলিম জাতির ইহ ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।’ তিনি এসময় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে মহররম তথা পবিত্র আশুরা পালনের জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘শহরে ৪৬টি ঈমামবারা কমিটি রয়েছে। এখানে সাম্প্রদায়িক কোনও সংঘাত নেই। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে আশুরা। নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র্যা ব টহল দিচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ বছর সৈয়দপুরে আশুরায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি।’