ওই প্রসূতির নাম বিউটি আরা (৩৫)। তিনি দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ উত্তর বংশিপুর এলাকার আব্দুল মান্নানের স্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর রাতে ওই চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রামের মুনতাহীনা পারভীন (২৫) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। শুধু তাই নয়, রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এবং অপারেশনের সময় কিডনি কেটে ফেলার অভিযোগও রয়েছে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। অবৈধ গর্ভপাত ঘটানোর মামলায় তার ৯ বছর সাজাও হয়েছিল।
প্রসূতি বিউটি আরার পরিবার সূত্রে জানা যায়, শনিবার ভোরে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা বিউটি আরাকে এইচ কে মাদার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করেন। সকালে ওই প্রসূতির সিজার করান চিকিৎসক হযরত আলী। সিজারের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বেলা ১১টার দিকে ইনজেকশন পুশ করার কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী ছটফট করতে করতে মারা যান। পরে স্বজনেরা কী ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে তা জানতে চাইলে রোগীর ফাইলপত্র নিয়ে চলে যান স্টাফরা। পরে তাদের আর কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। ভুল ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
নিহতের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, ‘সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরও আমার বোনের সঙ্গে কথা হয়। সে ভালো ছিল। ইনজেকশন পুশ করার পর ছটফট করে মারা যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
নিহতের আরেক বোন বিলকিস বেগম বলেন, ‘কী ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে তা দেখতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেখায়নি। রোগীর সঙ্গে থাকা ফাইলটিও গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ডা. হযরত আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা কী লিখবেন লেখেন।’ কী ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল এবং রোগীর ফাইলপত্র দেওয়া হচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।
জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, ‘এইচ কে মাদার কেয়ার হাসাপাতালের অনুমোদন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। বারবার বলার পরও অনুমোদন কিংবা নবায়নের জন্য আবেদন করেনি কর্তৃপক্ষ। এর আগেও সেখানে রোগীর মৃত্যু হয়েছিল এবং এ ব্যাপারে শোকজ করা হলেও তার সমুচিত জবাব দেয়নি তারা।’
ওই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বজলুর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের সংবাদ পাওয়ার পর সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় থানায় এখনও কোনও অভিযোগ দেননি রোগীর স্বজনেরা। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’