নেই নিজ ভাষায় বই, বিলুপ্তির পথে ওদের মাতৃভাষা

স্কুলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাদিনাজপুরের হাকিমপুর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাটে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লক্ষাধিক মানুষের বাস। কিন্তু নিজ মাতৃভাষায় পড়ালেখার কোনও সুযোগ নেই তাদের। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ভাষা। মায়ের ভাষা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য নিজ ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ।

হিলির ছাতনী চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সুমন টপ্প ও বাসন্তি খালকো বলে, আগে আমাদের ভাষায় সবাই কথা বলতো। এখন ধীরে ধীরে এর প্রচলন কমে আসছে। নিজের ভাষা ধরে রাখতে আমরা নিজ ভাষায় পড়ালেখা করতে চাই। আমাদের নিজ ভাষায় কথা বলতে চাই। এই স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে ৪০ জনের মতো আদিবাসী শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করছি। বাড়িতে নিজেদের ভাষায় কথা বললেও স্কুলে বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়। আমাদের নিজেদের ভাষার কোনও বই বা শিক্ষক না থাকায় ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো ভাষা বুঝতে পারে না। তাই স্কুলেও আসতে চায় না। আমাদের নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক থাকলে খুব ভালো হতো। আমরা ভালো মতো বুঝে শুনে পড়তে পারতাম। আমাদের সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা আরও শিক্ষিত হতো।

স্কুলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাহাকিমপুর উপজেলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি রুপ লাল তির্কি বলেন, ‘দিনাজপুর-৬ আসনের চার উপজেলায় উরাও, সাঁওতাল, মাহালি, মাহাতো, খাক হুমির, মুচিসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লক্ষাধিক আদিবাসী মানুষের বাস। এখন অনেক আদিবাসী শিশুরা পড়ালেখা করলেও স্কুল-কলেজে আমাদের নিজ মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ নেই। যার জন্য আমাদের এই ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের যে নিজস্ব ভাষা রয়েছে সেটি অনেকেই জানে না। তাই আদিবাসী শিশুদের জন্য স্কুল-কলেজে নিজ ভাষায় বই ও শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলে এসব ভাষা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যেত।’

স্কুলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা

হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘হাকিমপুর উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করলেও তাদের ভাষার কোনও বই নেই। এ বিষয়ে স্কুল- কলেজে শিক্ষকও নেই। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনও চাহিদা নেই। তাদের কাছ থেকে চাহিদা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের জন্য নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্য পুস্তক প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’