উন্নতমানের রেণু থেকে পোনা সরবরাহ ও মৎস্য চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নীলফামারীতে ৮ দশমিক ৩৩ একর জমির ওপর প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় খামারটি। এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। শুরুতেই এই প্রতিষ্ঠানটির পোনা ব্যাপক সুনাম অর্জন করলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও জনবল সংকটের কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে এর কার্যক্রম।
খামারের ক্ষেত্র সহকারী ইয়াহিয়া জানান, পানির পাম্প, জনবল, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্রিজ সরবরাহ করা হলে বাটা, পুঁটি, রুই, মৃগেল ও কার্প জাতীয় ১৪৫ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত রেণু উৎপাদন করা যেতো। যার সমমূল্য দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা বছরে আয় হতো। এছাড়াও টেবিল ফিশ (অপ্রয়োজনীয় মাছ) থেকে আয় হতো আরও ২৫ হাজার টাকা। এই খামারে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি রেণু উৎপাদন হচ্ছে।
অপরদিকে, পুকুর সংস্কারের অভাবে গেল কয়েক বছর ধরে এই মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে রেণু পোনা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া পুকুরগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তীব্র তাপদাহে এখানে প্রতিনিয়তই মারা যাচ্ছে পোনা ও মা মাছ। আর মা মাছ উৎপাদন না হলে রেণু ও পোনার আশা করা যায় না। নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় পোনা মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ে আটটি পুকুরের মধ্যে পানিশূন্য থাকে ছয়টি পুকুর।
এলাকাবাসী জানান, লোকবলের অভাবে গত পাঁচ বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হ্যাচারির কার্যক্রম। খামার ব্যবস্থাপক, ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (ক্ষেত্র সহকারী) ও পাম্প অপারেটর দিয়ে চলছে ঢিমেতালে কার্যক্রম। বাকি তিন পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে অফিস সহকারী, হ্যাচারি অ্যাটেন্ডেন্ট ও নৈশপ্রহরীর পদ। নেই গার্ড শেড ও জাল শুকানোর ঘর।
জেলা শহরের মৎস্য খামারি আমির আলী আক্ষেপ করে জানান, জনবলের অভাবে একসময়ের উত্তর অঞ্চলের স্বনামধন্য মৎস্য প্রজনন খামারটি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এ অবস্থায় মৎস্য প্রজনন খামারটিতে প্রয়োজনীয় উপকরণসহ জনবল নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
পোনা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নীলফামারী মৎস্য প্রজনন খামারের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল আলম জানান, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই সংকট নিরসন হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের দেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অফুরান সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য স্থানীয়ভাবে সারা দেশে ছোট বড় ১৪৮টি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার তৈরি করে মাছ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। খামারটির সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গুণগত মানের রেণু উৎপাদন করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।’