দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাজপুরের গরু বিক্রেতারা

ক্রেতাহীন হাটে গরু নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারাআর মাত্র কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ। তবে এখনও সেভাবে জমে ওঠেনি দিনাজপুরের পশুর হাটগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের সমাগম ঘটছে না। করোনার পাশাপাশি গরুর লাম্পিং রোগকে এর কারণ বলে অভিহিত করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে অনেকেরই আশা, ঈদের আগের ২-১টা হাট জমজমাট হবে।

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দিনাজপুরের অন্যতম পশুর হাট রেলওয়ে বাজারকে স্থানান্তর করা হয়েছে দিনাজপুর মহারাজা স্কুল মাঠে। তারপরও নেই তেমন বেচাবিক্রি। ক্রেতা তেমন না থাকায় এবং পশুর চাহিদামাফিক দাম না ওঠায় হতাশ বিক্রেতারা। 

চিরিরবন্দর থেকে গরু নিয়ে আসা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর যে গরুর দাম ছিল ৫০ হাজার এবার সেটার দাম বলছে ৪০ হাজার। প্রতিটি গরুতেই ৫-১০ হাজার টাকা কম দাম বলছেন ক্রেতারা। গরু বড় করতে যে পরিমাণ শ্রম ও খরচ হয়েছে সেই অনুযায়ী লোকসানে পড়তে হবে।

আমবাড়ি থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী হেদায়েত ইসলাম বলেন, এখনও যেহেতু সময় আছে তাই শেষ হাট পর্যন্ত দেখতে চাই। লোকসান তো করা যাবে না। করোনা আর গরুর লাম্পিং রোগের কারণে এবার দাম কিছুটা কম বলেও জানান তিনি।

গরু কিনতে আসা সফিকুল ইসলাম বলেন, এবার সবারই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। তাই বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম। হয়তো এ জন্যই ভালো দাম উঠছে না। অনেকে হয়তো সামনের দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করছেন।

কুরবানির জন্য পশু প্রস্তুতকারী খামারিসহ বসতবাড়িতে লালন-পালনকারীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে। পশু বিক্রির জন্য হাটে হাটে ঘুরছেন তারা।

খামার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাট জমে না ওঠায় এখনও সঠিক মূল্য নিয়ে শঙ্কায় তারা। দাম না ওঠায় খামারের কাজে সংশ্লিষ্টরা আছেন বেতন কম পাওয়ায় শঙ্কায়। 

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, গরু বাজারজাত করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারিভাবে যদি খামারিদের কথা বিবেচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো তাহলে সুবিধা পাওয়া যেতো। গরুর সঠিক মূল্য না পেলে খামারের কাজে সম্পৃক্তদের বেতন বা পারিশ্রমিক নিয়েও সমস্যা হতে পারে।

সদরের দক্ষিণ কোতয়ালী এলাকার মোজাম্মেল হক বলেন, আমার খামারে ১৯টি গরুর মধ্যে ১৭টি এবার বাজারজাত করবো। তবে করোনার কারণে বাজার আশঙ্কাজনক। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ছোটখাটো খামারিরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না।

বিরল উপজেলার দাড়াইল এলাকার খামারি মমিনুল ইসলাম বলেন, এবার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। এ কারণে গরুতে খরচ হয়েছে বেশি। ভালো দাম না পেলে আমরা লোকসানে পড়বো। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হবে।

সদর উপজেলার উত্তর গোসাইপুর এলাকার খামারি টুটুল ইসলাম বলেন, খামারিদের খামার চালানোই দুষ্কর ব্যাপার। এখন যেসব গরু বিক্রি করার মতো সেগুলোর সঠিক মূল্য পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় আছি। করোনার পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকায় চলছে বন্যা। লাম্পিং রোগও একটি সমস্যা। অনেক ধার করে গরু পালন করছি, তাই লোকসান দিয়ে হলেও কিছু বিক্রি করতে হবে। এখন আমরা খাবো নাকি গরুকে খাওয়াবো সেটিও ভাবতে হচ্ছে।  

রেলবাজার পশু হাটের ইজারাদার ইসানুর কবীর বলেন, এবার আমরাও বিপদের মুখে। অন্যান্য বছর দু-একটি বাজারে সমস্যা হয়েছে, কিন্তু এবার সব বাজারেই সমস্যা।এতে বাজার ইজারাদারদেরও আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। এসব বাজারের বড় অঙ্কের অর্থ আসে এই পশুর হাট থেকে। কিন্তু হাট না জমলে তো ইজারা আদায় হবে না।

বাজার জমে না উঠলেও আশঙ্কার কারণ নেই বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহিনুর আলম। তিনি বলেন, এবার জেলায় এক লাখ ৯৪ হাজার ২৭৩টি গবাদিপশু প্রস্তুত আছে, যেখানে চাহিদা এক লাখ ৩৫ হাজার ২০টি। বিক্রেতাদের আশঙ্কা থাকলেও এবার অনলাইনে গরু বেচাকেনা হচ্ছে। সেখানে গরুর বয়স, সাইজ, ওজন, মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংযুক্ত করে গরু বিক্রি করা যাবে। জেলার ১৩টি উপজেলায় ৫৯টি গবাদিপশুর হাট বসছে এবং সেটা মনিটরিং করছে ২৩টি ভেটেরিনার টিম। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে একমুখী যাতায়াত ব্যবস্থা চালু, মাস্ক পরিধানে বাধ্যবাধকতা, স্প্রে কার্যক্রমসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু বেচাকেনা হবে। এতে খামারিদের শঙ্কা দূর হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।