হিলিতে চালের দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বন্দর এলাকায় চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা কমেছে। তবে নিন্ম আয়ের মানুষদের দাবি দাম যেন আরও কমিয়ে সহনীয় মাত্রায়ি আনা হয়। আর যানজটসহ কিছু সমস্যার কারণে চাল আমদানি কম হলেও তা কেটে চালের আমদানি বাড়লে দাম কমবে বলে আশা আমদানিকারকদের।

হিলি স্থল শুল্কস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় কৃষকের উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ও চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ করে সরকার এতে করে পড়তা না হওয়ায় ৩০শে মে থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এবারে আমনের ভরা মৌসুমে গতকয়েক মাস ধরেই চালের মূল্য বৃদ্ধি হয়ে লাগামহীন হয়ে পড়ে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানির সিন্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী হিলিসহ দেশের বিভিন্ন আমদানিকারককে সাত লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। একইসঙ্গে চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫ ভাগ থেকে দু’দফায় কমিয়ে ১৫ ভাগ নির্ধারণ করে সরকার। এর ফলে দীর্ঘ দেড় বছর পর ৯ জানুয়ারি থেকে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়।

হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা গৃহবধু নাসিমা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের থেকে চালের দাম কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা করে কমেছে। আগে যে চাল ৪৫-৪৬ টাকা কিনে খেয়েছি এখন সে চাল ৪১ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে করে আমাদের মতো গরিব মানুষদের একটু সুবিধা হয়েছে। সবাই চাল কিনতে পারবে। তবে চালের দাম আরও কমলে ভালো হতো। কারণ আমরাতো গরিব মানুষ, করোনার কারণে কাজ-কাম নেই, ব্যবসা বাণিজ্য তেমন নেই। আমরা খুব অভাব অনটনের মধ্যেই আছি। আমাদেরতো চাল কিনে খাওয়া লাগে, তাই দাম যত কম হবে ততো আমাদের জন্য ভালো।

চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক খালেদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা দিন আনি দিন খাই। যে ভাবে চালের দাম বাড়ছিল, তাতে করে আমাদের মতো মানুষের যায় যায় অবস্থা হয়েছে। এখন বাইরে থেকে চাল আসার কারণে চালের দাম কিছুটা কমেছে। এতে করে কিছুটা সুবিধা হচ্ছে, এর থেকে দাম আরো একটু কমলে আরও সুবিধা হবে এটাই আমরা চাই।

বন্দরে আসা চাল খালাসে কাজ করছেন শ্রমিকরাহিলি বাজারের চাল বিক্রেতা অনুপ কুমার বসাক ও তপন কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে চালের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। আগে যে চাল ৪৮ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা কমে ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৮ জাতের চাল ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, এখন তা কমে ৪৫-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট চাল যেখানে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, এখন তা থেকে কমে ৫৪-৫৫টাকায় নেমেছে। ভারত থেকে চাল আমদানির জন্যই দেশের বাজারে চালের দাম অনেকটা কমেছে বলে জানান তিনি।

স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক রাজীব কুমার দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারের অনুমোদন স্বাপেক্ষে ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য এলসি খোলা হচ্ছে। বন্দর দিয়ে গত ৯ জানুয়ারি থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। আর ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ার ফলে দেশের বাজারে চালের দাম কমে এসেছে। চাল আমদানি স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে যে হারে চাল আমদানি হচ্ছে, এটি যদি বাড়ে তাহলে চালের দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।

স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধের পর সরকারের অনুমোদন স্বাপেক্ষে গত ৯ জানুয়ারি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৩০-৩৫ ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাসে বন্দর দিয়ে ২৬৬টি ট্রাকে ১০ হাজার ৭০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। বন্দর দিয়ে চাল আমদানির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বেড়েছে, তেমনি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয়ও বেড়েছে। চাল আমদানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তা খালাস করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানান তিনি।