সাড়ে চার মিনিটের মধ্যেই বেরোবি উপাচার্যের ক্যাম্পাস ত্যাগ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ মাত্র সাড়ে চার মিনিটের জন্য ক্যাম্পাসে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেই তিনি তড়িঘড়ি একটি মাইক্রোবাসে উঠে ক্যাম্পাস থেকে গোপনে চলে গেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য কলিম উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে আসেন না। এর আগে দুবার গভীর রাতে পেছনের গেট দিয়ে তার বাসভবনে এসে কিছুক্ষণ অবস্থান করে আবারও পেছনের গেট দিয়ে ঢাকায় ফিরে গেছেন। ক্যাম্পাসে আসেননি। এবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মূল প্রবেশ গেট ব্যবহার না করে এবারেও পেছনের গেট দিয়ে বাসভবনে আসেন। রাতে সেখানেই অবস্থান করেন। বুধবার সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দেওয়ার কথা থাকলেও উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার না করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে সকাল ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন।

তিনি গাড়ি থেকে নেমেই প্রশাসনিক ভবনের পেছনে অবস্থিত পতাকার স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়ান। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করছিলেন উপউপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ, রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও জনসংযোগ বিভাগের প্রশাসক অধ্যাপক নাজমুল হক। তারা পাঁচ জন মিলে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় মাত্র সাড়ে চার মিনিটে। এর পর তড়িঘড়ি করে উপাচার্য সঙ্গে আসা মাইক্রেবাসে উঠে উধাও হয়ে যান। তিনি কোথায় গেলেন কেউ বলতে পারেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি দ্রুতই ঢাকার উদ্দেশে রংপুর ত্যাগ করেন।

এদিকে, এ ঘটনা হজানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয় ক্যাম্পাসে। এ ঘটনার নিন্দা জানান, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এমনিতেই ক্যাম্পাসে আসেন না। তার উপর দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি অর্থ লুটপাটসহ নানান অপকর্মের বিষয়টি এখন দেশবাসী জানে। তার বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণসহ ৭৬৯ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র ইউজিসির তদন্ত কমিটির কাছে আমরা প্রদান করেছি। তার পরেও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে কোনও ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। বরং তিনি গোপনে চার-পাঁচ মিনিটের জন্য ক্যাম্পাসে এসে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে পালিয়ে গেলেন। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার বিষয়।’

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মতিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তার উচিত ছিল, সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা। কিন্তু আমরা কী দেখলাম? উপাচার্য হিসেবে অবৈধভাবে ব্যবহার করা তিনটি গাড়ির একটি ব্যবহার না করে সম্ভবত প্রক্টরের গাড়িতে করে ক্যাম্পাসে এসে চুপি চুপি ফুল দিয়ে পালিয়ে গেলেন। তিনি প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ দিকে জাতীয় পতাকা তুলেছেন। এরপর ম্যুরালে ফুল দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তিনি মাত্র সাড়ে চার মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘তিনি বার বার উপাচার্যের পদকে হাসি-তামাশায় পরিণত করেছেন। আমাদের তার আগমনের বিষয়টি জানানো হয়নি। অনেক শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা কেউ জানেন না। আসলে উপাচার্য এবারেও নাটক করলেন, প্রতারণা করলেন সবার সঙ্গে। যা আমরা কামনা করি না।’

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উপাচার্য সকাল ৯টায় শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। সেই শ্রদ্ধা নিবেদনের ছবিটিও জনসংযোগ বিভাগের সরবরাহ করা। সেখানে পাঁচ জনকে দেখা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে জনসংযোগ কর্মকর্তা এহতেরামুল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, সকালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এ ছাড়াও একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়েছে। সেখানে উপউপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সলোয়া ডীনা সভাপতিত্ব করেছেন এবং তাতে উপাচার্যও অংশ নেন।