ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে গেলো উপহারের ঘরের টিন, ভেঙে পড়লো পিলার!

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর নবনির্মিত ছয়টি ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। একইসঙ্গে ভেঙে পড়েছে ঘরের পিলার, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘর। নবনির্মিত এসব ঘরের এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে নির্মিত ঘরের মান নিয়ে। অভিযোগ উঠেছে- পিলারে রড না দেওয়া এবং দায়সারাভাবে কাজ করায় ঘরগুলোর এ অবস্থা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার (১০ মে) দিবাগত রাতে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর জয়বাংলা পল্লীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে এই ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘরে বসবাসরতরা জানিয়েছেন, অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তারা।

জানা যায়, রাতে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ঝড়ো বাতাসে ওই এলাকার আশপাশের কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হলেও নবনির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাঁচটি ঘরের বারান্দাসহ ঘরের চালার টিন ও বর্গা উড়ে যায়। ভেঙে পড়ে বারান্দার পিলার। বসবাসের শুরুতেই ঘর ভেঙে পড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রাণে বেঁচে যাওয়া ওই পাঁচ পরিবারসহ সেখানে বসবাসকারী অন্যদের মধ্যে।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া বিউটি বেগম (৪৫) বলেন, ‘মোক সরকার ঘর দিলো, কিন্তু এটা কেংকা ঘর? এনা বাতাসোত মোর ঘরের চালা উঁড়ি গিয়া পুখুরোত পড়লো। ছোলপোল নিয়া আল্লাহকে ডাকিছুনু। আল্লাহ রহম করো, প্রাণে বাঁচি গেলে মুই আর ওই ঘরোত থাকিম না। মোর ছোলপোলকে রক্ষা করো। মুই মনোত নিসো, মাঠোতে থাকিম তাও এঙ্কা ঘরোত যামু না আর। মুই মোর ছোলপোলকে হারাতে চাও না। এগলা মানসোক মারার জন্য করসে।’

ভেঙে পড়েছে উপহারের ঘরের পিলারচাল উড়ে যাওয়া অন্য ঘরের মালিক আর্জিনা বেগম, মতিয়ার রহমান, জাকির হোসেন বলেন, সামান্য ঝড়ে ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এই ঘরগুলোতে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। রড, কাঠ উড়ে গেছে, কাজ হয়েছে নিম্নমানের। আশপাশের সব ঘরের চাল নড়বড়ে।

সুফলভোগী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে উপহারের ঘরের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঘরগুলোর পিলারে কোনও রড না থাকায় একটু বাতাসেই ঘরগুলো দুলে ওঠে। ঘরের অনেক স্থানেই ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঘরে নেই পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। রাস্তা থেকে বহুদূর জমির মাঝখানে এসব ঘর নির্মাণ করা হলেও চলাচলের সড়কও করা হয়নি। শুরু থেকেই ভালো মানের কাজের দাবি করে এলেও সুফলভোগীদের সেই দাবি রাখা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এ অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন ঘর পাওয়া ১০০টি পরিবারের সদস্যরা। এই বাড়িগুলো নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে, প্রথমে খাস জমি শনাক্ত করে ভূমি অফিস। পরে ওই খাস জমিতে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য মোট ৭৬৯ টি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মুজিববর্ষে উপহার পাওয়া ঘরগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো সরকারি খরচেই মেরামত করে দেওয়া হবে। যারা ঘরগুলো পেয়েছে তারা ঘরগুলোতে উঠছে না। আমরা যে ছোট ছোট তালা লাগিয়ে দিয়েছি তা তারা খুলে দরজা-জানালা খুলে রাখে। এতে ঝড়ের সময় চালা উড়ে গেছে। আমরা মেরামত শুরু করেছি। আজ কালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।