এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের কেজি ৪ টাকা বাড়লো

দিনাজপুরের হিলিতে বোরোর ভরা মৌসুমেও সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের চালের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দামও বাড়ছে বলে দাবি করছেন মিল মালিকরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এদিকে ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে-খাওয়া মানুষজন।

সরেজমিন হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব চালের দোকানে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। স্বর্ণা জাতের চাল আগে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বেড়ে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ৪৪ টাকার রত্না এখন ৪৬ থেকে ৪৭, এছাড়া ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মিনিকেটের কেজি এখন ৫৬ টাকা।

হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা রেজাউল করিম ও ইসমাইল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমানে চালের দাম বেশি। কেজিতে ৪-৫ টাকার মতো বেড়েছে। যে হারে চালের দাম বাড়ছে, এতে করে আমাদের মতো গরিবের কিনে খাওয়া অসম্ভব ব্যাপার হয়ে গেছে। একেতো করোনার কারণে কাজ-কর্ম না থাকায় আয় রোজগার কমে গেছে। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ৩০০ টাকার মতো আয় হয়, জিনিসপত্রের যে দাম এতে করে বাজার করতেই ৩০০ টাকা শেষ! আর চাল কিনবো কীভাবে? চালের দাম একটু কম হলে আমাদের মতো গরিব মানুষের খুব সুবিধা হতো।

আরেক ক্রেতা আয়েশা সিদ্দিকা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার পাঁচজনের সংসার। একজন উপার্জন করেন। তার আয় দিয়ে কোনও রকমে করে সংসার চালাই। কিন্তু যে চাল কয়েকদিন আগে ৪০ থেকে ৪২ টাকায় কিনে খেলাম, আজকে সেটা ৪৬ টাকা। এতে করে কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের দাম কেজি প্রতি চার টাকার মতো বেড়েছে। বর্তমানে যে অবস্থা করোনার কারণে আমাদের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এর ওপর প্রতিমাসে যদি চালের দাম কেজি ২/৪ টাকা করে বাড়ে তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ কীভাবে বাঁচবো? এখন তো ভরা মৌসুম, সেই হিসেবে এখন চালের দাম কম হওয়ার কথা। উল্টো দাম বাড়ছে।

হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা সুব্রত কুন্ডু ও শরিফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে চাল আসা বন্ধ, ধানের দাম বেশি এবং চালের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম বাড়ছে বলে যদিও মিল মালিকরা আমাদের জানিয়েছেন। কিন্তু মূল বিষয় হলো, ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে এই সুযোগে অটোমিল মালিকরা মণ ৭০০-৮০০ টাকায় ধান কিনে স্টক করে রেখে দিয়েছেন। তারা যে দামে ধান কিনে রেখেছেন, এতে চালের দাম ৪০-৪১ টাকার মতো পড়তা পড়বে। কিন্তু তারা সেই দামে না বিক্রি করে এখন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। ফলে সব ধরনের চালের দাম বাড়ছে। কেউ যেন সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াতে না পারে সে বিষয়টি যদি প্রশাসন তদারকি করে তাহলে দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে। আর যদি তা না করা হয়, তাহলে আরও বাড়বে।

তারা আরও বলেন, এদিকে চালের দাম মোকামে বেশি হওয়ায় আমাদেরকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের এই দাম বাড়ার কারণে প্রতিদিন ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চালের আমদানি শুল্ক কমানোয় গত জানুয়ারি মাস থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। সে সময় বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। কিন্তু চালের আমদানি শুল্ক যেটি কমানো হয়েছিলো তা আবার বাড়ানোয় চাল আমদানিতে পড়তা না থাকায় লোকসানের আশঙ্কায় আমদানিকারকরা চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গত ৩০ এপ্রিল থেকে বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে।