লালমনিরহাটে সিলিন্ডারে ৫০ টাকা বেড়েছে এলপিজির দাম

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমার কথা ঘোষণা থাকলেও লালমনিরহাটের বাজারে এর কোনও প্রভাব পড়েনি। জুন মাসেই সিলিন্ডার প্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা।

লালমনিরহাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মান ও ব্র্যান্ডভেদে বর্তমানে প্রতিটি এলপিজি সিলিন্ডার গ্রাহকের কাছে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিটি সিলিন্ডার তারা ১০-২০ টাকা কমেই বিক্রি করছেন। কোনও কমিশন নেই বলে তারা দাবি করেন।

লালমনিরহাটে যমুনা, সেনা, ওমেরা, বেক্সিমকো স্মার্ট, লাভস, ওরিয়ন, বসুন্ধরা, জিগ্যাস, নাভানা, বিএম, ফ্রেশ ও প্রেট্রোম্যাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের এলপি গ্যাস বিক্রি হয়। তবে ওরিয়ন, ওমেরা, জিগ্যাস, যমুনা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো স্মার্ট সিলিন্ডার এবং ফ্রেশের সিলিন্ডার বেশি প্রচলিত।

জেলা শহরের জেল রোডের বাসিন্দা রাশেদ মিয়া রুবেল বলেন, গত কয়েকদিন আগে ১২ কেজি ওজনের ওমেরা এলপিজি নিয়েছি ৯৫০ টাকায়। এখন শুনতেছি ঈদের আগে গ্যাসের আরও দাম বাড়বে। করোনায় আয় কমেছে, এর ওপর নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা সাধারণ মানুষ নাজেহাল অবস্থায় রয়েছি।

কালীগঞ্জ উপজেলার মেসার্স রাবেয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আল মামুন বলেন, প্রত্যেক গ্যাস সিলিন্ডারে ৫০ টাকা করে দাম বেড়েছে। ডিলাররা ভালো বলতে পারবেন, আসলে সিলিন্ডার প্রতি কয় টাকা করে দাম বেড়েছে? আমি সিলিন্ডার প্রতি ১০-২০ টাকা লাভ নেই। একটা সিলিন্ডারের পেছনে প্রায় দুই হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। লাভও সীমিত, এতে পোষায় না।

বুড়িমারী বাজারের মেসার্স সওদাগর টাচের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জীবু বলেন, যমুনা ও ওরিয়ন ৯৩০ টাকা থেকে ৯৪০ টাকায় খুচরা বিক্রি করছি। খুচরা পর্যায়ে ১২ কেজি ওজনের প্রত্যেকটি সিলিন্ডার রিফিল ৯০০ থেকে ৯২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আগের মতো লাভ নেই। প্রতিযোগিতার বাজারে এখন সীমিত লাভ হয়।

তিরি আরও বলেন, ঈদের আগে সিলিন্ডার প্রতি আরও ৫০ টাকা বাড়তে পারে বলে আমাদেরকে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলার ওমেরা এলপিজি সিলিন্ডার পরিবেশক মেসার্স আসমানী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল হোসেন বলেন, পরিবহন খরচ, ভ্যাট, আয়কর, ব্যাংক ঋণের সুদ, গোডাউন ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, প্রত্যেক বাজারে সিলিন্ডার পৌঁছানোর খরচ বহনের পর কোম্পানির কমিশনের এক টাকাও হাতে থাকে না। এর ওপর তীব্র প্রতিযোগিতা। এখন ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। কারণ যে টাকা বিনিয়োগ করতে হয়, মাস শেষে সব খরচ বাদ দিলে কোনও কোনও মাসে ২০ হাজার টাকাও লাভ পাওয়া যায় না। এখন ব্যবসা পরিবর্তনের চিন্তায় আছি।

সেনা এলপিজির লালমনিরহাট জেলা পরিবেশক মেসার্স এমএল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. রেদওয়ানুল্লাহ বলেন, প্রত্যেক কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার প্রতি দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। একটা সিলিন্ডার গ্রাহকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে যে খরচ, তা ওঠানোই কষ্ট হয়ে পড়েছে। এ সেক্টরের ব্যবসায় এতো পুঁজি প্রয়োজন এবং ঝুঁকি, জানা ছিল না।

লালমনিরহাট জেলা মার্কেটিং অফিসার আব্দুর রহিম বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার মান ও ব্র্যান্ডভেদে খুচরা পর্যায়ে ৯৩০ থেকে ৯৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে ডিলার রেট কত, তা আমি বলতে পারছি না। তবে রিটেইলার ব্যবসায়ীদেরকে সিলিন্ডার প্রতি ৯০০ থেকে ৯২০ টাকায় রিফিল কিনতে হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান দামের তুলনায় মে মাসের শেষে গ্যাসের সিলিন্ডার প্রতি প্রায় ৭০ টাকা দাম কম ছিলো। কিন্তু ১০ জুনের পর থেকে দাম বেড়েছে।