হিলিতে বৃষ্টির দেখা নেই, বিপাকে আমন চাষিরা

দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টিতে বন্যা দেখা দিলেও দিনাজপুরের হিলির চিত্র ভিন্ন। অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরার কারণে মাটি ফেটে চৌচির। পানির অভাবে আমন রোপণ করতে পারছেন না কৃষক। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে রোপণ করছেন। 

এদিকে আগে ধান লাগানোর পর বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানি না থাকায় জমিতে আগাছা জমেছে। হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে ধানের গাছ। এতে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হিলিতে মোট আট হাজার ১২৬ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান ২৫০ হেক্টর ও উফশি জাতের ধান সাত হাজার ৮৭৬ হেক্টর। এখন পর্যন্ত হাইব্রিড জাতের ধান লক্ষ্যমাত্রার ২৫০ হেক্টর জমিতে রোপণ শেষ হয়েছে। উফশি জাতের ধান সাত হাজার ৮৭৬ হেক্টরের জায়গায় সাত হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে রোপণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এখনও বাকি আছে ৮১৩ হেক্টর জমি। 

বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করছেন অনেকে

প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিতে জমিতে আমন ধান রোপণ করে থাকেন কৃষকরা। শ্রাবণের ১৫ তারিখের মধ্যে জমিতে ধান রোপণ কার্যক্রম শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এবার কয়েক দিন ধরে চলা তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে অনেক কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না। ফলে অনেক জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে।

হিলির হরিহরপুর গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলে আগে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই আগাম ধান রোপণ করে ফেলে। তবে এখনও বেশকিছু জমি পড়ে আছে। পানির অভাবে সেই জমিতে ধান লাগানো যাচ্ছে না। সেচ দিয়ে ধান লাগানোর ফলে আমনের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে যে ধান পাওয়া যাবে, তাতে করে সব খরচ বাদ দিয়ে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।’

আগে বৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই আগাম ধান রোপণ করে ফেলে

হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক আসলাম হোসেন বলেন, ‘আমি অন্যের কাছ থেকে পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করি। প্রতিবছর সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানিতে আমন রোপণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে পানি নেই। তাই ধানও লাগাতে পারছি না। অন্যরা সেচ দিয়ে ধান লাগালেও, আমি এখনও বৃষ্টির অপেক্ষায়।’

একই গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ভেবেছিলাম ঈদের পর বৃষ্টি হবে। তখন ধান লাগাবো। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় জমির পানি সব শুকিয়ে গেছে। যেহেতু সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই খরচ বেশি হলেও সেচ দিয়ে ধান লাগাচ্ছি। জমি তো আর ফেলে রাখা যাবে না।’

ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা কৃষকদের

জালালপুর গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে জমির মাটি ফেটে গেছে। কোনও বৃষ্টি নেই। ধানের কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। প্রচুর ঘাস হচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। জমিতে ইউরিয়া সার দেওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। এরকম চললে ধানের আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না।’

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উপজেলায় একটু খরার প্রকোপ চলছে। এর ফলে কিছু জমিতে ধান রোপণের পরও পানি স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় মাটি ফেটে যাচ্ছে। আবার কিছু জমিতে পানি না থাকায় কৃষক ধান লাগাতে পারছে না। যেহেতু আমন মৌসুমে সেচের সুবিধা সেই ভাবে কৃষকদের থাকে না, তাই ওই জমিগুলোতে পানি পাওয়া পাচ্ছে না। এমন জমিতে কৃষকদের সম্পূরক সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’