বৃষ্টির দেখা নেই, আমন রোপণ নিয়ে বিপাকে কৃষক

দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিলেও নীলফামারীতে চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। জমির মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে মাঠ-ঘাট। এদিকে আমন ধান রোপণের মৌসুম চলে যাচ্ছে। পাট জাগ দেওয়ারও পানি নেই। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে সেচ দিয়ে পাট জাগসহ আমন ধান রোপণ করছেন।

এদিকে, আষাঢ়ে ধান লাগানোর পর আর বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সম্পূরক সেচ দিয়ে চারা বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে ধানের ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, নীলফামারীতে এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৭৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ধান লাগানো হয়েছে এক লাখ চার হাজার ৮৩১ হেক্টর জমিতে। আট হাজার ২৪৪ হেক্টর জমিতে এখনও ধান রোপণ বাকি।

প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক। কিন্তু এবার মাসব্যাপী অনাবৃষ্টির কারণে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে পানির অভাবে অনেক কৃষক ধান রোপণ করতে পারছেন না। ফলে অনেক জমি পতিত রয়েছে।

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, নীলফামারীতে আষাঢ় ও শ্রাবণে খরা চলায় বেশিরভাগ কৃষক এখন বাধ্য হয়ে বৈদ্যুতিক পাম্প ও শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের মাধ্যমে ধান রোপণ করছেন। তবে এখনও অনেক জমি পতিত থাকায় দুশ্চিন্তায় আছেন। সেচ দিয়ে ধান লাগানোর ফলে আমন উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক জমিতে সেচ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে চারা

একই উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের দোনদরী গ্রামের বর্গাচাষি আশরাফ আলী বলেন, জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রত্যেক বছর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে বৃষ্টির পানিতে ধানের আবাদ করি। এবার বেগতিক অবস্থা। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে হাল দেওয়া হয়নি। তাই ধানও লাগাতে পারছি না। যাদের টাকা-পয়সা আছে তারা সেচ দিয়ে ধান লাগালেও খরায় পুড়ে যাচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক শফিউদ্দিন বলেন, ভেবেছিলাম শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হবে, কিন্তু মাসতো শেষ। বৃষ্টি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা ধান লাগিয়েছি, তাও রোদে পুড়ে মরে যাচ্ছে। সেচের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অর্থের অভাবে আর সেচ দিতে পারছি না।

উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের উত্তরাশশী গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হক বলেন, শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টির পানিতে নিচু শ্রেণির চার বিঘা জমিতে আমন ধান রোপণ করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমি ফেটে গেছে। ধানের কী হবে তা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকের অবস্থা কাহিল হবে। 

তিনি আরও বলেন, ভাদ্র মাসে তো আর ধান লাগানো যায় না! এত দিন ধানের জমি সবুজে সবুজে ভরে যেতো। এবার ধানের বাম্পার ফলন তো দূরের কথা, খরচের টাকাই উঠবে না।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, চলতি আমন মৌসুমে খরার প্রকোপ চলছে। ফলে কিছু কিছু জমিতে ধান রোপণের পরও পানি স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় মাটি ফেটে যাচ্ছে। আবার অনেকে পানির অভাবে ধান লাগাতে পারছে না। আমন মৌসুমে সেচ সুবিধা থাকে না। তাই এমন জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে কৃষকদের সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, জেলায় এবার এক লাখ ১৩ হাজার ৭৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক লাখ চার হাজার ৮৩১ হেক্টর জমিতে রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এসব চারার তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সেচ পাম্প ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।