চামড়ায় ধরেছে পচন, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

দিনাজপুরের হিলিতে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে সংরক্ষণের ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ক্রেতা না আসায় বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে চামড়া ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক চামড়ায় পচন ধরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এক সপ্তাহের মধ্যে চামড়া বিক্রি করতে না পারলে ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী তোরাব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা হিলির আড়তদারদের কাছে চামড়া বিক্রি করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও টাকা-পয়সা পাইনি। আমাদের মহাজনরাই এখন পর্যন্ত কোনও চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। এ কারণে তারা কোথায় থেকে আমাদের টাকা দেবে। টিভিতে শুধু শুনছি, চামড়া কেনা হচ্ছে কিন্তু বাস্তবে কেউ তো চামড়া কিনছেন না। তাহলে কোনটা ঠিক? আবার দাম কয় একটা, হয় আরেকটা। এভাবে আমরা পুঁজি হারিয়ে একেবারে পথে বসার উপক্রম হয়েছি।’

হিলির মুন্সিপট্টির চামড়া ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চামড়া কেনার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও পার্টি আসছে না। যে দামে আমরা কিনেছি, এর সঙ্গে লবণের দাম যোগ করে যে পড়তা সে হিসাবে কেউ চামড়ার দাম বলছেন না। পার্টি না এলে আমরা এসব চামড়া বিক্রি করবো কীভাবে? ধারদেনা ও ব্যাংকে লোন করে চামড়া কিনেছি, কিন্তু বিক্রি করতে না পেরে আমরা খুব অসুবিধার মধ্যে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা বলেছিলেন, ভালো দামে চামড়া কেনাবেচা হবে। সে আশ্বাসে আমরা চামড়া কিনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও ট্যানারি মালিকরা তো দূরের কথা, অন্য কোনও পার্টিও চামড়া কিনতে আসেনি।’

মুন্সিপট্টির আরেক চামড়া ব্যবসায়ী আমজাদ মুন্সি বলেন, ‘আমরা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া ক্রয় করে, তা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমাদের কয়েকজন ব্যবসায়ীর পাঁচ হাজারের মতো গরুর চামড়া মজুত রয়েছে। আর খাসির চামড়া যেগুলো ছিল সেগুলো ইতোমধ্যে ক্রেতা না থাকায় আমরা ফেলে দিয়েছি। কিন্তু ঈদের পর ২১ দিন পার হলেও চামড়ার কোনও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। কোনও ক্রেতা উঁকি মারতেও আসছেন না।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক চামড়ায় পচন ধরেছে, যার কারণে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। গন্ধের কারণে পাড়ায় লোক থাকতে পারছেন না। তারা আমাদের বারবার এসব সরিয়ে নিতে বলছেন। ধারদেনা করে চামড়া কিনেছি। বহু মানুষ চামড়ার টাকা পাবে, তারা এসে চাপ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে, চামড়া নিয়ে আমরা খুব বিপদে আছি। আমাদের দাবি, সরকার একটু আমাদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে যেভাবেই হোক এসব মালামাল বিক্রির ব্যবস্থা করে দিক, না হলে আমাদের একেবারে পথে বসতে হবে।’
 
হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নাকি এখন পর্যন্ত কোনও চামড়াই বিক্রি করতে পারেননি। বিষয়টি আমি জেলাকে অবহিত করেছি। এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক আজকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে হয়তো এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হবে। তারপর সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’