যে খবরে কমছে চালের দাম

দেশের বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশের দেশ থেকে চাল আমদানির এমন খবরে অটোমিল মালিকরা চাল ছেড়ে দেওয়ায় কেজিতে কমেছে ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে। এদিকে, চালের দাম কিছুটা কমায় স্বস্তি ফিরেছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের মাঝে।

বুধবার (১৮ আগস্ট) সরেজমিনে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব দোকানেই চালের ভালো সরবরাহ রয়েছে। তবে ক্রেতার উপস্থিতি তুলনামূলক কম। সব ধরনের চালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা করে কমেছে। আটাশ জাতের চাল বর্তমানে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ছিল। এছাড়া মিনিকেট জাতের চাল কমে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যা আগে ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা ছিল।

বাজারে চাল কিনতে আসা ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে কাজকর্ম তেমন না থাকায় আয় অনেকটা কমে গেছে। এমন অবস্থায় যেভাবে গরিবের খাওয়ার মোটা চালের দাম বাড়ছিল তাতে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে সম্প্রতি ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা কমেছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আমরা এত কিছু বুঝি না, সরকার আমদানি করবে বা অন্যকিছু করবে করুক আমরা চাই, চালের দাম যেন কম থাকে।’

rice(1)

হিলি বাজারের চাল বিক্রেতা স্বপন কুমার ও অনুপ বসাক বলেন, ‘দেশে বোরো মৌসুমের ধানের দাম বেশি থাকায় চালের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম বেশি বলে জানিয়েছিল অটোমিল মালিকরা। প্রায় প্রতিদিনই মোকামে চালের দাম বেড়েছে। এতে করে চালের বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছিল, ফলে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছিল। তবে আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যেই ভারত থেকে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হবে, এমন খবরে অটোমিল মালিকরা মজুত করা চাল বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে, ফলে আমরা আগে যে দামে কিনতাম তার চেয়ে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে কম দাম চাচ্ছে, এরপরও চাল নিতে বলছে। এদিকে ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে ইতোমধ্যেই চালের দাম কেজি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা করে কমেছে। তবে বাজারে চালের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ইতোমধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। একইসঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা রয়েছে। ইতোমধ্যেই হিলি স্থলবন্দরের বেশ কয়েকজন আমদানিকারক চাল আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। যেহেতু ভারতে চালের দাম কম রয়েছে, আমদানির অনুমতির পর বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হলে দেশে চালের বাজারে যে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেটি কমে আসবে।

উল্লেখ্য, চাল আমদানির ক্ষেত্রে ৬২.৫ শতাংশ শুল্কহার বিদ্যমান ছিল। সম্প্রতি রেয়াতি হারে চাল আমদানির সুযোগ দিয়ে শুল্কহার কমিয়ে গত ১২ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই যা কাস্টমসের সার্ভারে সংযুক্ত করা হয়েছে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে শর্তসাপেক্ষে অব্যাহতি দিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা বর্তমানে ভারত থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ বা এর একটু কম বেশি শুল্ক পরিশোধ করে চাল খালাস করে নিতে পারবেন।