তিস্তায় পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন

নীলফামারীর ডিমলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমলেও বেড়েছে ভাঙন। সোমবার (২৩ আগস্ট) বিকাল ৩টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে, সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত এ নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম।

উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুর রহমান বলেন, ‘উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বাড়ায় ভেন্ডাবাড়ি ও ছাতুনামা চর গ্রামের ৮০০ পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এখন পানি কমায় ওই দুই গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বেড়েছে ভাঙন। গত এক মাসে ওই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বহারা হয়েছে।’

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কমলেও ইউনিয়নের তেলিপাড়া স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটির ভাঙন শুরু হয়েছে।’

খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এবার তিস্তার পানি বাড়া-কমায় ইউনিয়নের ৪৫০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও দোহল পাড়ার রিং বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার ইতোমধ্যে তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ছয় হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে আমনের চারা পচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’

খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৭০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০ পরিবার। এছাড়াও আমন চারা পানিতে তলিয়ে থাকায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১৩ তারিখ ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সেদিন বিকাল ৩টায় ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ১৪ আগস্ট বিকাল ৩টায় ১০, ১৫ আগস্ট ১০, ১৬ আগস্ট সকাল ছয়টায় ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ১৬ আগস্ট বিকালে পানি দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ১৮ আগস্ট বিকাল ৩টায় বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচে নামলেও ১৯ আগস্ট ফের বেড়ে বিকাল ৩টায় ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

টানা ৯দিন তিস্তার পানিতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত ১৫ গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা প্রিন্স জানান, আজ নদীর পানি সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকাল ৩টায় ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। উজানের ঢল ও বন্যার পানি সামাল দিতে ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট খুলে রাখা হয়েছে।