নীলফামারী ডোমার উপজেলার চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনে যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে উঠেছে। আর এসবের জন্য অভিযুক্ত করা হচ্ছে মাস্টার আশরাফুল ইসলামকে। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর, বিনা অনুমতিতে সরকারি কোয়ার্টার ও বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বেডিং (বিছানা পত্র) সরঞ্জাম ঘাটতি, ভুয়া ভাউচারে সরকারি অর্থ লোপাট, ক্ষমতা দেখিয়ে ফল বিক্রেতাদের দিয়ে প্রক্সি ডিউটি করানো, প্লাটফর্মে তামাকজাত দ্রব্য অবাধে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেওয়াসহ অনিয়ম আর দুর্নীতির নানা ঘটনায় তার নাম উঠে এসেছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলে স্টেশন মাস্টার আশরাফুল ইসলাম সহকর্মীদের বদলি করে দেওয়ার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার (এসএম গ্রেড-৪) ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিলাহাটি স্টেশনে যোগদান করেন আশরাফুল ইসলাম। ২০২১ সালের ৫ এপ্রিল সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বদলি নিয়ে একই কর্মস্থলে যোগদান করেন আশরাফুলের স্ত্রী নাজনিন পারভীন। এরপর থেকে স্ত্রী কর্মস্থলে না থাকলেও স্টেশন মাস্টার নিজেই হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী পোর্টার সোহেল জুলাই মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও স্টেশন মাস্টার নিজহাতে সোহেলের স্বাক্ষর করেন বলে অভিযোগ করেছেন স্টেশনের কর্মীরা।
চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনের কর্মী (এসএম গ্রেড-৩) মো. মোমিন উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েও কোনও ফল পাইনি।
তিনি অভিযোগ করেন, স্টেশন সংলগ্ন দুটি কোয়ার্টারকে কাগজ-কলমে পরিত্যক্ত দেখিয়ে একটি কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন তিনি (স্টেশন মাস্টার)। এমনকি বিদ্যুৎ বিলও দিতে হয় না তাকে। কোয়ার্টার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ প্রতি মাসে রেল হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে যোগসাজশে প্রকল্পের গেটকিপার মার্জান নিজের ডিউটি করান ফল বিক্রেতা মঞ্জুকে দিয়ে। এ বিষয়ে অভিযোগ উঠলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্টেশনের একটি সূত্র জানায়, ট্রেনকে সিগন্যাল দেখাতে বর্তমানে কেরোসিন তেলের ব্যবহার না থাকলেও প্রতিমাসে কেরোসিন তেল কেনার ভুয়া ভাউচারে তোলা হচ্ছে টাকা।
তবে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আশরাফুল ইসলাম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানোয়াট। তিনি দাবি করেন, করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে একটু অনিয়ম হতেই পারে।
তবে কোয়ার্টার পরিত্যক্ত দেখিয়ে বসবাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। আর কেরোসিন তেল কেনার নামে ভাউচার দিয়ে প্রতিমাসে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই টাকা দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়। তার দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে জানে।