বিদ্যালয় পরিচালক এখন সবজি চাষি

মহামারি করোনার সংক্রমণরোধে সারাদেশের মতো দিনাজপুরের হিলিতে কিন্ডারগার্টেনসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ রয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে বেতন-ভাতা হলেও বেসরকারি বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনে হচ্ছে না। বেতন বন্ধ থাকায় বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড প্রি-ক্যাডেট বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক পেশা বদলে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এরই মধ্যে বিদ্যালয় মাঠে নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ করেছেন বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড বিদ্যালয়ের পরিচালক ওবায়দুর রহমান।

সরেজমিনে বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনের ফাঁকা অংশে লাগানো হয়েছে লালশাক, পাটশাক ও পালংশাক। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের সামনের ফাঁকা অংশে লাগানো হয়েছে শিমগাছ, করলাগাছ, লাউগাছ, ঢেড়সসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। ইতোমধ্যে লালশাকসহ অন্যান্য সবজি বড় হয়েছে। প্রতিদিন সেখান থেকে পরিবারের চাহিদা মতো সবজি তোলা হয়। বাড়তি সবজিগুলো আশপাশের মানুষসহ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যালয়ের সামনের ফাঁকা অংশে লাগানো হয়েছে লালশাক, পাটশাক ও পালংশাক

বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড বিদ্যালয়ের পরিচালক ওবায়দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে জীবনের সবকিছু ব্যয় করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। এ জন্য নাম দিয়েছি বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড বিদ্যালয়। স্বপ্নরাজ্যে শিশুরা ভিন্ন আঙ্গিকে পড়াশোনার মাধ্যমে জীবন গঠনের জ্ঞান অর্জন করবে। ভালো ফলাফলের পাশাপাশি তারা মানবিক মানুষ হয়ে উঠবে। সবই ঠিকঠাক চলছিল। বিদ্যালয় দাঁড় করাতে একযুগ সময় লেগেছে। ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলায় ১ম-৩য় স্থানসহ আট জন ট্যালেন্টপুলে ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল। জেএসসি পরীক্ষায় উপজেলায় সম্মানজনক অবস্থান রয়েছে বিদ্যালয়ের। এই বিদ্যালয়ের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু করোনার থাবায় দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ বিদ্যালয় দুটি। এতে বেকার হয়ে পড়ি আমরা। সম্প্রতি আমার ছেলে ইফতি রিফাতের দেখানো পথে বিদ্যালয়ের মাঠে সবজি চাষ করে নিজেকে চাষি হিসেবে উপস্থাপন করতে পেরেছি।’ 

বিদ্যালয়ের সামনের ফাঁকা অংশে লাগানো হয়েছে লালশাক

তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের মাঠে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ করেছি। গাছের যত্ন করছি। নিজ হাতে তুলছি সবজি। বেকার সময়টা ভালো কাটছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা পূরণ করছি। পাশাপাশি শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা নিচ্ছেন এসব শাক-সবজি।’

বাংলাহিলি ড্রিমল্যান্ড বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হাসনাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন-ফি থেকে আমাদের বেতন হয়। কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আয়ের পথ বন্ধ। শিক্ষকদের বেতনও বন্ধ। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা। দীর্ঘদিন বেতন বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষক জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় গেছেন। অন্যরা বিদ্যালয় খোলার অপেক্ষায় আছেন।’