আগাম আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আগাম জাতের রোপা আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। সোনালি ধানে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

আগাম জাতের আমন ধানের দাম ভালো পাওয়ায় আবাদ বাড়ছে। কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাটি আগাম আলু ও ধান চাষের জন্য উপযোগী বলে জানিয়েছে স্থানীয় ‍কৃষি অফিস।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার ১৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও উফশি জাতের রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয় ১৪ হাজার ৮৭৫ হেক্টর। এ বছর পাঁচ হেক্টর বেশি জমিতে  চাষ হয়েছে। হাইব্রিড জাতের রোপা আমন ফলনে ১০৮ থেকে ১১০ দিন এবং উফশি জাতের রোপা আমন ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারেন কৃষকরা।

জমি চাষ, মজুরি, সেচ, বালাইনাশক, কর্তন, মাড়াই ও পরিবহন বাবদ হাইব্রিডে প্রতি বিঘায় সাত হাজার ৭০০ টাকা এবং উফশিতে সাত হাজার ২৫০ টাকা ব্যয় হয়। 

কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা বিঘাপ্রতি ১৪ থেকে সাড়ে ১৫ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এ ছাড়া বাজারে ধান ও গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের দাম ভালো থাকায় বিঘাপ্রতি ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। প্রায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন চাষিরা।

চার ফসলি এসব জমির আগাম জাতের ধান কাটা শেষে এ অঞ্চলের কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এসব জমিতে রবি মৌসুমে দুই বার আলু চাষ হয়। একটি আগাম আলু ও অপরটি বীজ আলু। এরপরই খরিপ-১ মৌসুমে আবাদ হয় পাট ও ভুট্টা।

উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের রণচন্ডি বাজারের কৃষক লালু প্রসাদ বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের ক্ষেতে তেমন একটা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়নি। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে ধান কাটাই-মাড়াই শুরু হবে। এরপর আলু চাষের জন্য দ্রুত জমি প্রস্তত করা হবে।

কৃষক অনিল চন্দ্র রায় জানান, ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে কৃষি শ্রমিকের সংকট হয় না। কারণ এ সময়ে (ভাদ্র-আশ্বিন) কাজ না থাকায় বেকার হয়ে পড়েন কৃষি শ্রমিকরা। এ সময় তারা কাজের সন্ধানে ছুটে যান দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা গুলোতে। তাই কৃষি শ্রমিকের সংকট হবে না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় জানান, বর্তমান বাজারে ধানের দামের চেয়ে চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা খড়। প্রতি বিঘায় খড় বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। ফলে আগাম জাতের রোপা আমন চাষে লাভবান হওয়ায় চাষিরা দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জানান, বিশেষ করে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের ধান চাষে কৃষকরা লাভবান হয়। সেজন্য তাদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। করোনা মহামারিতে আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। ধারনা করছি, আগাম ধান ও আলু চাষ বাড়বে। তাছাড়া এখানকার মাটি আগাম জাতের ধান ও আলু চাষের উপযোগী।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাটি উঁচু ও বেলে দোআঁশ ধান ও আলু চাষে ব্যাপক ফলন পাওয়া যায়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। করোনা মহামারিতে এ জাতের ধানে লাভবান হবেন কৃষকরা।