নীলফামারীর ছয় উপজেলার হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩১ চিকিৎসক ও ২৫২ জন নার্সের পদশূন্য আছে। এতে চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার জন্য তাদের বিভাগীয় শহরে যেতে হয়। এ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তির শেষ নেই।
জেলার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া অনেক ব্যয়বহুল বলে জানিয়েছেন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ফরিদা বেগম। তার বাড়ি সদরের কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের পশ্চিম গুড়গুড়ি শখের বাজার গ্রামে। ফরিদা পিত্তথলির ব্যথায় গত ৮ আগস্ট ওই ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসক নেই বলে আমাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছে কর্তৃপক্ষ। ওখানে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় ২২৬ চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন ৯৫ জন। ৩৬২ নার্সের স্থলে রয়েছেন ১১০ জন। চিকিৎসক-নার্স মিলে ৩৮৩ জনের পদশূন্য।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ৪১ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ১০ জন, নার্স ৯৪ জনের মধ্যে ৫৬ জন রয়েছেন। জলঢাকা উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৩ জন চিকিৎসকের স্থলে রয়েছেন ১৫ জন, নার্স ৩০ জনের মধ্যে আছেন ২৭ জন।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৩ চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন ১৪ জন, নার্স ২৫ জনের মধ্যে আছেন ২৩ জন। ডোমার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ২০ জন ও নার্স ৩৩ জনের স্থলে ২৮ জন রয়েছেন।
ডিমলা উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ চিকিৎসকের পদ থাকলেও রয়েছেন ১৮ জন, নার্স ৩০ জনের স্থলে আছেন ২৬ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু শফি মাহমুদ বলেন, এখানে ১৪ চিকিৎসক দিয়ে প্রতিদিন আউটডোরসহ গড়ে সাড়ে ৩০০ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। চিকিৎসক সংকট থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
কিশোরগঞ্জ ও ডিমলা উপজেলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদায়ন না থাকায় গাইনি সিজারসহ অন্যান্য অপারেশন ছয় মাস ধরে বন্ধ আছে। দুই উপজেলার রোগীদের সিজারিয়ান ও সাধারণ অপারেশন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসবব্যথায় কাতরাচ্ছেন মরজিনা বেগম। তিনি উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের আব্দুল কাদেরের স্ত্রী। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে হয়। এতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয় তাদের।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে চিকিৎসক সংকটে কার্ডিওলজি বিভাগ বন্ধ আছে। অথচ সেখানে ২২টি মনিটর, চারটি ডিফ্রিলেটর ও দুটি বেডসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যার মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
সবকিছু আছে অথচ চিকিৎসকের অভাবে চালু হয়নি কার্ডিওলজি বিভাগ। দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার দাবি স্থানীয়দের।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, চাহিদার তুলনায় চিকিৎসক ও নার্স সংকট রয়েছে জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নার্স নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। সংকটের মধ্যে দিয়ে যতদূর পারছি, চিকিৎসাসেবা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।