পঞ্চগড়ে হঠাৎ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টের রোগী বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে চাপ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু, নারী ও পুরুষ মিলে প্রায় ছয়শ’ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আর হাসপাতালের ১০০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১৫৪ জন। রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে রোগীদের মেঝে ও বারান্দাতে সেবা নিতে হচ্ছে। আবার অনেক রোগীকে বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় নানা ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা উপকরণের পর্যাপ্ত মজুত আছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন ২৮০ থেকে ৩০০ জন নারী, ১২০ থেকে ১৪০ জন পুরুষ ও ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিশু রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। সে হিসাব অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে বহির্বিভাগ থেকে প্রায় তিন হাজার নারী, প্রায় ৯৮০ জন পুরুষ ও এক হাজার ১২০ জন শিশু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসা সেবা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে কখনও ঠান্ডা, কখনও গরম ও বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশুরা। দিনে গরমের কারণে কখনও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে, আবার রাতে ঘুমানোর সময় ঘরে ফ্যান চলায় ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হচ্ছেন তারা।
তবে হাসপাতালে ওষুধসহ অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণের যথেষ্ট মজুত আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে রোগীরা বলছেন, তাদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে হচ্ছে।
জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের শেখেরহাট গ্রামের রাজিয়া বেগম বলেন, ছেলের পাঁচ দিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট আর পায়খানা করছিল। তিন দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সকালে হাসপাতাল থেকে একটি করে ইনজেকশন দিয়েছে। নাপা সিরাপ ও নাকের একটি ড্রপ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।
ছেলের ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝার এলাকার আখতারা বানু। হাসপাতালে সিট পাননি, তিন দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় আছেন। ছেলের পায়খানা কমেছে এবং বর্তমানে সে কিছুটা সুস্থ।
জেলা সদরের মসজিদপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আখতার হোসেন বলেন, আধুনিক সদর হাসপাতাল হলেও এখানে চিকিৎসক, বেড ও ওষুধ সংকট রয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, জটিল কোনও রোগের চিকিৎসার সুবিধা হাসপাতালে নেই। রোগী নিয়ে এলে তাৎক্ষণিক রংপুর বা দিনাজপুরে স্থানান্তর করা হয়। ফলে বাইরে গিয়ে আমাদের হয়রানি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অর্থ ও সময়ও নষ্ট হয়।
হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা জেলা সদরের জালাসী এলাকার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রোগী জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পর পরই হাতে ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সব রোগীর তো ওষুধ কেনার সামর্থ্য থাকে না। ওষুধ আনার আগেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে। হাসপাতালে কী সরকার ওষুধ সাপ্লাই দেন না, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে। রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ, গ্যাস, অক্সিজেনসহ সব সেবা দেওয়া হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুর রহমান বলেন, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আড়াইশ’ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। এটি ব্যবহার উপযোগী হলে রোগীদের বেড সংখ্যাসহ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদ জানান তিনি।