অসহায়-গরিবদের জন্য বিনা পয়সার খাবারের হোটেল

ভিক্ষুক, পথচারীসহ ক্ষুধার্ত মানুষকে বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছে দিনাজপুরের বিরামপুরের হাজী হোটেল। বিনা পয়সায় খাবার পেয়ে খুশি গরিব অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষজন। এদিকে, হোটেলটির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

বিরামপুর উপজেলার পল্লবী মোড়ে অবস্থিত হাজী হোটেল। প্রতিদিনই গরিব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষরা হোটেলটিতে বসে বিনা পয়সায় খাবার খান। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ওই হোটেল মালিক বেলাল মল্লিক প্রায় ২০০ মানুষকে খাবার খাওয়ান। খাবারের তালিকায় থাকে সাদা ভাত, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ছোট মাছ, সবজি, ডাল এবং মাঝেমধ্যে খিচুড়িও থাকে। ব্যবসার পাশাপাশি অনাহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজের শান্তি খুঁজে পান। প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই মানবিক কাজটি করছেন বেলাল।

বিরামপুরের হাজী হোটেল

খাবার খেতে আসা বৃদ্ধ আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার সন্তান নেই। তাই আমাকে কে খাওয়াবে আর কে কী করবে? বাধ্য হয়ে এই বয়সে মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে নিজের খাবার জোগাড় করি। আমার বাড়ি উপজেলার দিওড় এলাকায়, প্রতিদিনের মতো সকালে পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে শহরে এসেছি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে, ক্ষুধা লেগেছে। শুনেছিলাম, এ হোটেলে বিনা পয়সায় খাবার খাওয়ায় তাই এসেছি। হোটেলে ঢোকামাত্র ক্ষুধার্ত শুনে খাবার দেয়। এরপর থেকে বিরামপুরে এলে খাবার চিন্তা করতে হবে না।’

বৃদ্ধা আমেনা বেওয়া বলেন, ‘আমি গরিব। স্বামী-সন্তান কেউ এই দুনিয়াতে নেই। তাই আমি ভিক্ষা করে খাই। পেটে ক্ষুধা লাগলে আমি এই হোটেলে চলে আসি। এখানে আমাদেরকে পেট ভরে খাবার দেয়, কোনও পয়সা নেয় না।’

হাজী হোটেলের কর্মচারী সোহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই হোটেলে আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। মানুষদের খাবার পরিবেশন করি আমি। মালিকের অর্ডার আছে বৃহস্পতিবার ছাড়াও যেকোনও দিন বিশেষ করে গরিব অসহায় পথচারী মানুষজন খেতে চাইলে তাদের খেতে দিতে হবে। তাই যদি কোনও ক্ষুধার্ত মানুষ আসেন, সবার আগে তাকে খেতে দেই।’

hotel2

স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বেলাল মল্লিক যে কাজটি করছেন, এটি একটি মানবিক দৃষ্টান্তমূলক কাজ। ভিক্ষুক-পথচারীসহ ক্ষুধার্তরা বিনা পয়সায় খাবার পাচ্ছেন। তিনি এই কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এর জন্য আমরা এলাকাবাসী হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তবে তার পাশাপাশি এলাকার আর যে বৃত্তবান মানুষজন আছেন তারাও যেন এমন কাজে এগিয়ে আসেন।’

বেলাল মল্লিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফুটপাতের ব্যবসা দিয়ে শুরু করে আমি এখন এ পর্যায়ে এসেছি। খুব ছোট থেকেই ধীরে ধীরে এই অবস্থানে এসেছি। আমি জানি ক্ষুধার জ্বালা কী। পেটে ক্ষুধা লাগলে তখন আর লজ্জা থাকে না। এই পেটের জন্যই আজ মানুষ অনেক খারাপ কাজ করছে। এছাড়া মানুষ তো মানুষেরই জন্য। ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দিলে আল্লাহ খুশি হন। তাছাড়া অনাহারী মানুষের কষ্ট দেখলে আমার নিজের খুব কষ্ট হয়। তাই ব্যবসার পাশাপাশি যতটুকু পারি এসব অসহায় মানুষের সেবা করি। এটা করে নিজের মধ্যে একটা আলাদা সুখ অনুভব করি। আমার ইচ্ছা আছে, যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এসব অনাহারী মানুষের মুখে আহার তুলে দেবো।’