বৈরী আবহাওয়ায় পচে গেছে আগাম আলু, বিপাকে চাষি

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে আগাম আলু চাষ করেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু সেই আলুর বীজ ও উঠতি গাছ বৈরী আবহাওয়ায় পচে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলায় আশ্বিন ও কার্তিক মাসের বৃষ্টি এবং গত কয়েক দিনের তীব্র তাপদাহে আলু পচে গেছে। আর একমাস পরেই ওইসব আলু উত্তোলন করা যেত। জমিতে অধিক পানি জমে থাকায় পচে যাচ্ছে গাছ। আবারও তীব্র রোদে ঝিমিয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের মতো চাষ দিয়ে নতুন করে আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এই উপজেলায় চার হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম আলু চাষ করেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু আশ্বিন-কার্তিক মাসের বৃষ্টিতে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষকের আলু পচে যায়। তারা ফের ধার-দেনা করে জমি প্রস্তুত, বীজ সংগ্রহ ও সার প্রয়োগ করে আলু রোপণ করছেন। কিন্তু এতেও কোনও কাজ হয়নি। এর পর সেই রোপণকৃত আলু বৃষ্টির পানি আর তীব্র তাপদাহে আবারও পচন ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে একই জমিতে দুই থেকে তিন বার আলু রোপণ করে অর্থ সংকটে পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলমগীরের চার বিঘা, সাজ্জাদ হোসেন বাদশার চার বিঘা, শামসুল হকের দুই বিঘা, আব্দুল হামিদের তিন বিঘাসহ অন্যান্য কৃষকের ৩০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী আলুতে পচন ও গাছ ঝিমিয়ে পড়েছে। তাই নতুন করে আলু আবাদের জন্য হালচাষ দিচ্ছেন তারা।

কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বাদশা জানান, বেশি দামের আশায় আগাম আলু রোপণ করেছি। কিন্তু এবারের বৈরী আবহাওয়ায় আলু চাষে বাধ সাধে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার আলু রোপণে হালচাষ, আলু বীজ, সার ও শ্রমিকসহ খরচ তিনগুণ দাঁড়াবে। এ ছাড়া ন্যায্য বাজার মূল্য না পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হিমশিম ক্ষেতে হবে।

সদর ইউনিয়নের কেশবা গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে আগাম আলু দুই বার রোপণ করেছিলাম। সেই আলুও পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তৃতীয় বারের মতো রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। জানি না এবার কপালে কী আছে। আলু রোপণে খরচ হয়েছে বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা কীভাবে কোথা থেকে তুলবো, সেই হিসাব মেলাতে পারছি না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, আশ্বিন ও কার্তিক মাসের বৃষ্টিপাত এবং খরায় কিছু কৃষকের আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে (মাটিতে) অধিক পানি জমে থাকায়, তা এখন তীব্র রোধের ফলে আলু গাছ মরে যাচ্ছে। 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় জানান, বৈরী আবহাওয়ায় মাটিতে রসের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আগাম জাতের আলুর গাছে পচন ধরেছে। সাময়িক এই ক্ষতির জন্য কৃষি বিভাগ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, এটা একটা সাময়িক সমস্যা। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে আশা করি আগাম জাতের আলু চাষে কৃষক আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আলুর ফলন ও বাজারে ভালো দাম পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।