উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ

ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের আদেশ স্থগিত ও কাজ চলমান রাখা নিয়ে উচ্চ আদালতের রুল জারির পরও কুড়িগ্রামের সদরের ধরলা সেতুর অ্যাপ্রোচ-যাত্রাপুর জিসি সড়কের সেতুর নির্মাণকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খোদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, দুই দফায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কপি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার পরও নির্বাহী প্রকৌশলী চুক্তি বাতিলের ‘অজুহাত’ তুলে কাজে বাধা দিচ্ছেন। যা আদালত অবমাননার শামিল। এতে নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে জনগণের চলাচলে ভোগান্তি দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

গত ২৫ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ একটি রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করেন। রুলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে এক মাসের জন্য স্থগিত এবং কাজপ্রাপ্ত ঠিকাদারকে কেন কাজ চলমান রাখার নির্দেশনা দেওয়া হবে না তা জানাতে চার সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়। এরপর ১৬ নভেম্বর এই আদেশের সময়সীমা আরও তিন মাসের জন্য বর্ধিত করে আদেশ দেন আদালত।

তবে কুড়িগ্রাম এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা আদালেতের নির্দেশনার কপি পাননি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করা এবং বারবার চিঠি দিয়ে কাজ শুরুর তাগাদা দেওয়ার পরও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখায় ঠিকাদারের সঙ্গে আইনগত প্রক্রিয়ায় চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে, ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চিঠি চালাচালি এবং আইনি প্রক্রিয়ার বেড়াজালে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে ওই সড়কে চলাচলকারী তিন ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা সেতু অ্যাপ্রোচ-যাত্রাপুর জিসি সড়কে ধরলা শাখা নদীর ওপর ৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। বসুন্ধরা অ্যান্ড আবুবকর (জেভি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এরপর কাজ শুরু করেন ঠিকাদার গোলাম রব্বানী। কিন্তু ঠিকাদারের সঙ্গে এলজিইডির চুক্তি বাতিলের আইনি জটিলতায় বর্তমানে সেতুর নির্মাণকাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ অবর্ণনীয় বিড়ম্বনা নিয়ে ওই সড়কে যাতায়াত করছেন।

ঠিকাদারের অভিযোগ, ডিজাইন পরিবর্তন, ক্যালকুলেশনসহ বিভিন্ন কারণে এলজিইডি নির্মাণকাজ স্থগিত করেছিল। পরবর্তীতে টাইম বাড়িয়ে কাজ শুরু করা হয়। প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারি কালীন স্বাস্থ্যবিধিসহ নিয়ন্ত্রিত জনজীবনের কারণে নির্মাণকাজে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়। বিষয়টি এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও একতরফা সিদ্ধান্তে চুক্তি বাতিল করে।

ঠিকাদার গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে রিট করি। আদালত এলজিইডির চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তকে দুই দফায় চার মাসের জন্য স্থগিত করেন এবং কাজ শুরু করে তা চলমান রাখার বিষয়ে রুল জারি করে কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে আদালতের আদেশের কপি এবং কাজ শুরু করার আবেদন দিয়ে আমি পুনরায় সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করি। কিন্তু এলজিইডি কর্তৃপক্ষ পুলিশ পাঠিয়ে আমার কাজ বন্ধ করে দেয়। তাদের আদালতের আদেশের কপি দিলেও গ্রহণ করেননি।’

ঠিকাদার আরও বলেন, ‘সময়মতো কাজ শেষ না করার যে অভিযোগে আমার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে, নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া করে এই কাজ শেষ করতে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় লাগবে। এতে জনভোগান্তি আরও বাড়বে। নির্মাণকাজে ১২টি গার্ডারের জন্য অনুমোদিত স্টেজিংয়ের আটটি প্রস্তুত করা হয়েছে। মোট কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ করেছি। এ অবস্থায় আমাকে কাজ করতে না দিলে বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবো। স্টেজিংগুলো সরিয়ে নিতে হলেও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে।’

আদালতের নির্দেশনার পরও কাজ করতে না দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু। আদেশের কপি দেখে তিনি বলেন, ‘এই আদেশের ফলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তটি স্থগিত হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ওই ঠিকাদারের কাজ চলমান রাখতে আর কোনও বাধা নেই। এরপরও ঠিকাদারকে কাজ চলমান রাখতে না দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল।’

জানতে চাইলে এলজিইডি কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘গোলাম রব্বানী ওই কাজের ঠিকাদার নন। তার সঙ্গে আমাদের চুক্তিও হয়নি।’

তবে ঠিকাদার গোলাম রব্বানী দাবি করেন, ক্ষমতাপ্রাপ্ত স্বত্বাধিকারী হওয়ায় সেতু নির্মাণকাজের সব কাগজপত্রে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এই কাজের বিপরীতে ব্যাংক আমার অনুকূলে এক কোটি ৫৩ লাখ টাকা লোনও দিয়েছে।

আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কোনও নির্দেশনার কপি আমরা পাইনি।’