আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। দিনটি এলেই মহীয়সী বেগম রোকেয়াকে নিয়ে জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাদের শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। একমাস আগে থেকে চলে ধোয়া-মোছা, রঙ আর পরিষ্কার করার কাজ। অনুষ্ঠিত হয় সপ্তাহব্যাপী আলোচনা সভা, সেমিনার আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বক্তৃতায় রোকেয়ার স্মৃতিকে জাগরূক করার জন্য দেওয়া হয় নানান প্রতিশ্রুতি। কিন্তু বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নেই। বরং ধ্বংস হতে বসেছে রোকেয়ার বাস্তুভিটা, স্মৃতি কেন্দ্রসহ বেগম রোকেয়ার সব স্মৃতিচিহ্ন।
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে। তার স্মৃতিকে ধরে রাখা, তার জীবন আর রচনা নিয়ে গবেষণা এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সেখানে নির্মাণ করা হয় বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র। ২০০১ সালে শেখ হাসিনা এ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতি কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। স্মৃতি কেন্দ্রের কর্তৃত্ব থাকবে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় না বাংলা একাডেমির, এ নিয়ে দুপক্ষের রশি টানাটানিতে পার হয়েছে ১৪ বছর। এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘ ১৫ বছর কোনও বেতন-ভাতা পাননি। অবশেষে হাইকোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্মৃতি কেন্দ্রের দুজনের চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়ার আদেশ এসেছে আদালত থেকে। কিন্তু যে তিন কর্মচারী দীর্ঘ ১৫ বছর বিনা বেতনে সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন স্মৃতি কেন্দ্রটি, তাদের চাকরি হয়নি। তারা এখন দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন।
রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর সেখানে সহায়-সম্বলহীন নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হতো। এ ছাড়াও সঙ্গীত শিক্ষা, অঙ্ক শেখাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা এখানকার লাইব্রেরিতে থাকা বই নিয়ে গবেষণার কাজ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর বন্ধ থাকার কারণে এখন কোনও কার্যক্রম নেই। গত দু বছর সঙ্গীত শিক্ষা ও অঙ্কন শেখানো হতো, করোনা অতিমারীর কারণে সেটিও এখন বন্ধ রয়েছে। এখন বই বিহীন লাইব্রেরি ছাড়া আর কোনও কার্যক্রম নেই।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান জিনিসপত্র। অত্যাধুনিক অডিটোরিয়ামটির চেয়ারসহ আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ফ্যান চলে না।
একই অবস্থা বেগম রোকেয়ার বাস্তুভিটাতেও। আজ অবধি সেখানে কোনও স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। অযত্নে-অবহেলায় সেটিও এখন ধ্বংসপ্রায়।
সার্বিক বিষয়ে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের উপপরিচালক ফারুখ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু লাইব্রেরি খোলা আছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় বই নেই। ভবনটির সংস্কারের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’