অটোচালককে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে

পাওনা টাকা চাইতে গেলে এক অটোচালককে তিন ঘণ্টা আটকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বাবুলের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ নির্যাতনের শিকার অটোচালককে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে। তবে এ বিষয়ে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও এবং ঘটনার পর পাঁচ দিন পার হলেও মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি তারাগঞ্জ থানা পুলিশ। উল্টো আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আপস করে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী মাহবুব আলম (৪০) তারাগঞ্জ থানার হাড়িয়ালকুঠি ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ভাড়া করা অটো চালান তিনি। তার উপার্জিত টাকা জমিয়ে ও ধারদেনা করে নতুন অটো কেনার জন্য ৭০ হাজার টাকা জোগাড় করেন। দুই বছর আগে সে সময়ের হাড়িয়ালকুঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বাবুল অটো কিনে দেওয়ার কথা মাহবুবের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেন। বেশ কিছু দিন ঘোরানোর পর এই আওয়ামী লীগ নেতা ওই অটোচালককে ডেকে ৫০ হাজার টাকা দেন। বাকি ২০ হাজার টাকা কয়েক দিনের মধ্যে দেবেন বলেও জানান। কিন্তু এত দিনেও সে টাকা দেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগীর দাবি, গত ১৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাত ৮টার দিকে মাহবুব টাকা চাইতে বাবুলের ডাঙ্গীরহাট বাজার এলাকার দোকানে যান। এ সময় টাকা চাইলে বাবুল ও তার বড় ভাই শামছুল আলম (৪৫), ছোট ভাই বুলবুল হোসেন বুলু (৩২), ফুফাতো ভাই রফিকুল ইসলাম (৪০) ও ফুফাতো ভাই আনিছুলের ছেলে সেলিম রেজা (৩০) মাহবুবকে গালিগালাজ করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল পায়ের বুটজুতা দিয়ে মাহবুবকে উপর্যুপরি লাথি মারেন। চিৎকার শুনে লোকজন থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় পুলিশ তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তবে নির্যাতনকারী আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ চলে যায়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মাহবুব আওয়ামী লীগ নেতা বাবুলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু পাঁচ দিন পার হলেও পুলিশ অভিযোগটি আমলে নেয়নি। 

এ বিষয়ে হারুন-অর-রশিদ বাবুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, মাহবুবের কাছ থেকে তিনি কোনও টাকা নেননি। একটি বিশেষ মহল সাজানো নাটক করে তাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন।

হাড়িয়ালকুঠি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় অটোচালককে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

এলাকাবাসী জানান, বাবুল এবারের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হলেও পরাজিত হয়েছেন। এর আগের পাঁচ বছর তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। পাঁচ বছর ধরে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আসছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল বলেন, ‘সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর একটি মহল আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে হেয় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

রংপুর-২ আসনের (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল হাড়িয়ালকুঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। সে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আমি নিজেও পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সবার সঙ্গে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে জানতে বুধবার বিকালে তারাগঞ্জ থানার ওসি ফারুক আহামেদের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সকালে অটোচালককে নির্যাতনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।