ছেলের গোয়ালঘরে বৃদ্ধা মায়ের বসবাস 

স্বামী ছেড়ে গেছেন প্রায় ছয় বছর আগে। এরপর দুই ছেলে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন মহেছেনা। ৫-৬ মাস আগে বড় ছেলে দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। সঙ্গে নিজের করা ঘরটাও ভেঙে নিয়ে যান। তবে প্রথম স্ত্রীর ছেলেকে রেখে যান মা মহেছেনার কাছে। এরপর ১০ বছর বয়সী নাতিকে নিয়ে ষাটোর্ধ্ব মহেছেনার আশ্রয় হয়েছে ছোট ছেলের গোয়ালঘরে।

মহেছেনার বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের সুরিরডারা গ্রামে। ওই গ্রামের ইমান আলীর স্ত্রী তিনি। তবে স্বামী ছেড়ে চলে যাওয়ায় অসহায় জীবনযাপন করছেন এই বৃদ্ধা।

মহেছেনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালঘরের একদিকে একটি মাচা অন্যদিকে শোবার বিছানা। মাঝখানে গরু রাখার স্থান। গোবর-মূত্রের গন্ধ নিয়ে সেই ঘরেই বসবাস মহেছেনার। যেন নিজ ভূমিতে পরবাসী তিনি। ছোট ছেলে বাড়িতে থাকলেও স্বল্প আয়ে মায়ের জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে দেওয়ার সামর্থ্য নেই তার। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ছেলের গোয়ালঘরে আশ্রয় হয়েছে মায়ের।

মহেছেনা বলেন, ‘বড় বেটা প্রথম বউ ছাড়ি দিয়া ফির বিয়া করি অন্যটেই থাকে। নাতিটাক মোর কাছত রাখি গেইছে। ছোট বেটা দিন আনি দিন খায়। মোক ঘর করি দেয় কাই? নাতিটাক নিয়া ছোট বেটার গৈইলত (গোয়ালে) থাকঙ। গোয়ালঘরে সমস্যা হয়। কিন্তু কী করমো বাবা, ঘর করারতো সামর্থ্য নাই!’

অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজের ও নাতির খাবার জোগাড় করেন মহেছেনা। নিজের বয়স কত সেটাও ঠিকমতো বলতে পারেন না। তবে গোয়ালঘরে থাকা নিয়ে তার ছোট ছেলের প্রতি কোনও অভিযোগ নেই। বরং ছেলের সমস্যার কথা জানালেন এই বৃদ্ধা মা। 

তিনি বলেন, ‘নাতিসহ যাওয়ার আর জায়গা নাই। মাইনষের বাড়িত কামাই করি আনি নাতিসহ খাঙ। ছোট বেটা নিজে চইলবার পায় না মোক কেমন করি দিবে। উয়ারও (ওরও) একটায় ঘর। কাইয়ো ঘরও দেয়না, সাহায্যও করে না।’

মহেছেনার ছোট ছেলে কাজে যাওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মহেছেনা যে বাড়িতে কাজ করেন সেই বাড়ির বড় ছেলে মারুফ আহমেদ মহেছেনা ও তার নাতির জন্য আলাদা ঘর করে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে সেজন্য সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মারুফ আহমেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ায় ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাড়া পেয়েছি। আরও কিছু সহায়তা দরকার। সবার সহায়তা পেলে আগামী মাসেই মহেছেনা ও তার নাতির জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’