টানা ৪ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায়

মাঘের মাঝামাঝি থেকে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। 

পঞ্চগড়ে টানা চার দিন ধরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরের এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়েছে চার দিন। এর আগে রবিবার (৩০ জানুয়ারি) পঞ্চগড়ে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শনিবার ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। 

কনকনে শীতে শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিরাও কাবু হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সকাল ৯-১০টার পর সূর্যের দেখা মিললেও হিমেল বাতাসে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে।

কৃষি শ্রমিক, চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ শীতে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ফলে কাজ না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।অনেকে শীত উপেক্ষা করে জীবিকার প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। টানা শীতের প্রকোপে জেলাজুড়ে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। 

জেলা শহরের পান দোকানদার আমিনার রহমান জানান, পান বিক্রি করে সংসার চলে। তাই বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে দোকান খুলতে হয়। বাতাসের কারণে দোকানের ভেতরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। 

হোটেল শ্রমিক নুর নবী জানান, ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে হোটেলে কাজের জন্য আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হলে হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে। রিকশা-ভ্যানে উঠলে আরও শীত লাগে।

অটোরিকশাচালক শরিফুল জানান, হাট-বাজারে সড়ক-মহাসড়কে লোকজনের উপস্থিতি কম। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত যাত্রী পাওয়া যায় না। আয় কমে গেছে। এতে মহাজনের টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সিরাজউদ্দৌলা পলিন জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। প্রতিবছর এই সময়ে এখানকার মানুষ ঠান্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন প্রায় ৩৪ হাজার কম্বল বিতরণ করেছে। শীতবস্ত্রের চাহিদা বাড়লেও জেলা প্রশাসনের কাছে নতুন করে কোনও শীতবস্ত্র আসেনি। তবে শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. শাহা আলম মিয়া জানান, ঘন কুয়াশার স্থায়িত্ব বেশি হলে এই সময়ের ফসলে ক্ষতি হতে পারে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত কোথাও কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তারপরও মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঘন কুয়াশায় বীজতলা যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

তেঁতুলিয়ার আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, গতকালের তুলনায় আজকে তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। জানুয়ারি মাসে ২০ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায়। গত চার দিন ধরে এখানে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

পড়ুন:
আবহাওয়ার আরও খবর। 
তাপমাত্রার আরও খবর।