করোনার কারণে দু’বছর ধরে বন্ধ থাকার পর এবার আবারও শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিন দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বোয়ালমারী বারুণী গঙ্গাস্নান। এ উপলক্ষে সেখানে বসেছে মেলা। বুধবার সকাল থেকে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার কাজলদিঘী কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের করতোয়া নদীর উত্তরমুখী স্রোতে এই স্নান শুরু হয়। আত্মশুদ্ধি ও পুণ্যের লক্ষ্যে পঞ্চগড় জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সী লাখো পুণ্যার্থী এখানে আসেন।
বোয়ালমারী বারুনী গঙ্গা মন্দির কমিটি প্রতি বছর এই স্নানের আয়োজন করে। এবার করতোয়ার দুই পাড় পুণ্যার্থীতে ভরে গেছে। এখানে চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রিদশী তিথিতে চৈত্র মাসে তিন দিনব্যাপী পুণ্যস্নান চলে। এই স্নানে করতোয়া নদীর দু’তীর ঘেঁষে চলছে পূজা-অর্চনা। শত শত পূজারি ও নরসুন্দর স্নান চলাকালে চুল কাটার কাজে ব্যস্ত। পবিত্র হওয়ার জন্য অনেকে মাথার চুল বিসর্জন দিচ্ছেন।
বোয়ালমারী বারুণী কালিগঙ্গা মন্দিরের সভাপতি পরেশ চন্দ্র বর্মণ জানান, এখানে এবার ব্যাপক লোকসমাগম হয়েছে। কেউ পাপ মুক্তি, কেউ মঙ্গল কামনা, কেউ বাবা-মায়ের স্বর্গলাভসহ নানান মানতে এখানে আসেন। অনেকে চুল বিসর্জন দেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের স্নান তিন দিন হলেও এখানে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন থাকে। তবে রমজান উপলক্ষে এবার মেলাও তিন দিন চলবে। সব শ্রেণির মানুষের বিনোদনের জন্য মেলায় নাচ-গান, যাত্রা, সার্কাসের ব্যবস্থা রয়েছে। মেলা উপলক্ষে এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়। পুণ্যস্নান উপলক্ষে মন্দির কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত মেলাটি এবার এক লাখ ৬৩ হাজার টাকায় ডাকা হয়েছে। এখানে প্রায় ছোটবড় দুই হাজারেরও বেশি দোকানপাট বসেছে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন থেকে আসা কার্তিক চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রয়াত বাবা-মা যেন স্বর্গবাসী হন, পরিবারের যেন মঙ্গল হয় এজন্য এখানে এসেছি।’
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের জগবন্ধু বর্মণ বলেন, ‘উত্তরমুখী স্রোতে বহমান স্থানটি আমাদের ধর্মে একটি পবিত্র স্থান। পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বোয়ালমারীর করতোয়া নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার স্রোত উত্তরমুখী হওয়ায় এখানে অনেক দূর-দূরান্তের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন।’
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে যাতে কোনও প্রকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের টহল টিমও এসব কার্যক্রম মনিটরিং করছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বীরা পুণ্য স্নান করছেন। এ আয়োজনকে ঘিরে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।