হিলি দিয়ে ২ বছর ধরে ভারতে যাওয়া বন্ধ, বিপাকে পাসপোর্টযাত্রীরা

দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দুই বছর ধরে ভারতে যেতে পারছেন না পাসপোর্টযাত্রীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণসহ নানা কাজে ভারতে যেতে চাওয়া ব্যক্তিরা। বাড়তি টাকা খরচ করে বিকল্প পথে ভারতে যেতে হচ্ছে তাদের।

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে ২০২০ সালের ২৩ মার্চ হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলে ১৪ মাস পর গত ১৬ মে কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এতে শুধুমাত্র ভারত থেকে পাসপোর্টযাত্রীরা আসতে পারছেন। যারা বিমান ও অন্যান্য বন্দর দিয়ে ভারতে গেছেন তারা ফিরতে পারছেন।

কিন্তু এই পথ দিয়ে যাত্রী গ্রহণ করছে না ভারত। ফলে পাসপোর্টযাত্রীরা ভারতে যেতে পারছেন না। ভারতে যাওয়া বন্ধ থাকায় যাত্রীপ্রতি ৫০০ টাকা করে যে ভ্রমণ কর পেতো সরকার, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুই বছর ধরে। আগে এই পথ দিয়ে প্রতিদিন ৫০০ পাসপোর্টযাত্রী ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক হোসেন বলেন, ‘আশপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে চিকিৎসাসহ নানা কাজে ভারতে যাতায়াত করতাম। কিন্তু করোনার অজুহাতে দীর্ঘদিন ভারতে যেতে পারছি না। তবে ভারত থেকে যাত্রীরা আসতে পারছেন। বহুদূর ঘুরে বাড়তি টাকা খরচ করে আমাদের ভারতে যেতে হচ্ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাই ভারতে যাতায়াত চালুর দাবি জানাই। এতে আমাদের কষ্ট কমবে।’

ভারতে চিকিৎসা নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ভারত থেকে বাংলাদেশে পাসপোর্টেযাত্রীরা আসতে পারলেও ভারতে যেতে পারছেন না। আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ। উপায় না পেয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে হয়। যাতায়াত বন্ধ থাকায় ভারতে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছি না। এতে আমাদের রোগ জটিল হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা যারা আগে ভারতে চিকিৎসা নিয়েছি, তাদের ওষুধ ফুরিয়ে যাওয়ায় নতুন ওষুধ কিনতে পারছি না। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে পারছি না। এতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমরা চরম বেকায়দায় পড়েছি।’

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন উর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এই কারণে আমরা সমস্যায় পড়েছি। বিভিন্ন সময়ে পণ্য আমদানি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভারতীয় রফতানিকারকদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারছি না। পণ্যের দাম ও মানের বিষয়ে নিজেরা অথবা আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে মান নিশ্চিত করতে হতো। কিন্তু দুই বছর ধরে সেটি করতে পারছি না। যাতায়াত বন্ধের কারণে অনেক খারাপ পণ্য ভারতীয় ব্যবসায়ীরা রফতানি করছেন। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দেশের মানুষও খারাপ পণ্য পাচ্ছেন। সরকারের কাছে অনুরোধ, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত চালু করে আমাদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচান।’

হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ওসি মো. বদিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত ১৬ মে থেকে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। তবে শুধুমাত্র ভারত থেকে যাত্রীরা আসতে পারছেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যেতে পারছেন না। ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাত্রী গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করায় যাতায়াত শুরু হয়নি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রী গ্রহণ করলেই যাতায়াত শুরু হবে। তবে তারা এখনও যাত্রী গ্রহণের বিষয়ে আমাদের কিছুই জানায়নি।’