কুড়িগ্রামে ২৯ ভাগ শিশু খর্বকায় 

পুষ্টি পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি সূচকে এখনও পিছিয়ে রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা। জেলার পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বয়সের তুলনায় শতকরা ২৯ ভাগ শিশু খর্বকায় থেকে যাচ্ছে। সরকারের ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে পরা এই জেলায় পুষ্টি চাহিদা পূরণে মূল প্রতিবন্ধকতা দারিদ্রতা ও শিক্ষায় অনগ্রসরতা। শনিবার (২৩ এপ্রিল) পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের বরাত দিয়ে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ। সরকারি প্রতিবেদনে ক্রমবর্ধমান উন্নতি হলেও এখনও বেশ কয়েকটি সূচকে কুড়িগ্রাম জেলা পিছিয়ে রয়েছে বলে জানানো হয়।

২০১৯ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের বরাত দিয়ে জেলার পুষ্টি প্রোফাইলে দেখানো হয় জেলার মোট জনসংখ্যা ২৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৫৩ জন। এরমধ্যে শিশু রয়েছে তিন লাখ তিন হাজার ৫৬ জন এবং কিশোর-কিশোরী রয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার ৫২১ জন।  

পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভায় বিডিএইচএস ও দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনার বরাত এবং ন্যাশনাল স্ট্যাটাসে দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী খর্বকায় বা বয়সের তুলনায় খাটো শিশুর যেখানে বাংলাদেশের মোট গড় শতকরা ২৮ ভাগ, সেখানে কুড়িগ্রাম জেলার মোট গড় ২৯ ভাগ। উচ্চতার তুলনায় কম ওজনে সারাদেশের গড় যেখানে ১০ ভাগ, সেখানে কুড়িগ্রাম জেলার গড় ১৩ ভাগ। তবে বয়সের তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার বাংলাদেশে গড়ে ২৩ ভাগ হলেও কুড়িগ্রামে তা ১৮ ভাগ।

এদিকে পানির প্রাপ্যতার দিক থেকে বাংলাদেশের মোট গড় যেখানে ৯৯ ভাগ, সেখানে কুড়িগ্রাম জেলা রয়েছে শতভাগে। আর স্যনিটেশন ব্যবস্থাপনায় কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের মোট গড় ৬৪ ভাগের সম পর্যায়ে রয়েছে। তবে হাত ধোয়া ও সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে মোট গড় ৭৫ ভাগ হলেও কুড়িগ্রাম জেলা ১০ ভাগ পিছিয়ে ৬৫ ভাগে রয়েছে।

সার্বিক পস্থিতিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সূচকে দেখা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে উচ্চতার তুলনায় কম ওজন ২০১৪ সালে ছিল ১৪ ভাগ, ২০১৯ সালে নেমে দাঁড়িয়েছে ১০ ভাগ, ২০২৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ ভাগ। বয়সের তুলনায় কম ওজন ২০১৪ সালে ছিল ৩৩ ভাগ, ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৩ ভাগ, ২০২৫ সালে জাতীয় পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ ভাগ। বয়সের তুলনায় খর্বকায় ২০১৪ সালে ছিল ৩৬ ভাগ, ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৮ ভাগ, ২০২৫ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ ভাগ।

সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ বলেন, ‘মূলত দরিদ্র প্রবণ এলাকা হওয়ায় এখানকার চরাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ পুষ্টিকর খাবারের জোগান দিতে পারেন না। আবার কিছু অঞ্চলে শিক্ষায় অনগ্রসরতার কারণে অল্প খরচে কীভাবে পুষ্টিকর খাবারের জোগান দেওয়া যায় সে সম্পর্কে মানুষের ধারণা নেই। ফলে এখনও অনেক পরিবার পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না।’

সমস্যা থেকে উত্তরণে বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমরা পুষ্টি সপ্তাহে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা বিভিন্ন সূচকে জাতীয় পর্যায়ের সূচকের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো।’

সভায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মধ্যমেয়াদি কার্যক্রম পরিকল্পনা থেকে এখন দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত হয়েছি। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদেরকে টার্গেট পূরণ করতে হলে সরকারের দেওয়া কার্যক্রমগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।