কু‌ড়িগ্রা‌মে আবারও বাড়‌ছে সব নদ-নদীর পা‌নি

কয়েকদিন ধরে কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আবারও বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি। ফলে এসব নদ-নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।

তবে বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও অন্যান্য নদ-নদী অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বাভাস নেই।

এদিকে, জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় সব নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে পাউবো জানায়, ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টিপাতের কারণে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা অববাহিকা বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

পাউবো জানায়, মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ‌্যা ৬টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার যথাক্রমে ১০২ ও ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেইসঙ্গে বাড়‌ছে দুধকুমার ন‌দের পা‌নি।

সম্প্রতি শেষ হওয়া বন্যার ধকল সামলে না উঠতেই আবারও পানি বাড়তে থাকায় নদ-নদী অববাহিকায় ফের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার কৃষক ইসলাম ও এখলাস জানান, এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকায় কৃষিজমি তলিয়ে গিয়ে তারা অপূরণীয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাড়িঘরের অবস্থাও করুণ। পানি নেমে যাওয়ার পর এখনও বাড়িঘর মেরামত করতে পারেননি। আবারও পানি বাড়তে থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এখলাস বলেন, ‘পানি আবারও বাড়তাছে। ফের বান হইলে আমাগো বাইচা থাকা কঠিন হইবো। কেমনে সামাল দেবো সেটাই ভাইবা পাইতাছি না।’

এসব এলাকার কৃষকরা জানান, চরাঞ্চলে তাদের চিনা আবাদ নষ্ট হওয়ার পর পাট চাষ করেছিলেন। বন্যায় সেই পাটও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। সহযোগিতা না পেলে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

এদিকে, বন্যাদুর্গতদের সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। জেলার বাইরে থেকে অনেক সামাজিক সংগঠন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে বন্যাদুর্গতদের মাঝে এসব সহায়তা বিতরণ করছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রাপ্ত বরাদ্দের মধ্যে ৫৩৮ মেট্রিক টন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে; যার সিংগভাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গো খাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে এখনও মৌসুমি বায়ুর প্রভাব রয়েছে। ফলে বৃষ্টিপাত হবে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হলে নদনদীর পানি বাড়বে, এটা স্বাভাবিক। তবে আপাতত তিস্তার পানি বেড়ে এর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্যান্য নদনদীর অববাহিকায় বন্যার পূর্বাভাস নেই।’