১০ কেজি চালের বদলে চেয়ারম্যান দিচ্ছিলেন ১৬৬ টাকা!

ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ জনপ্রতি ১০ কেজি চালের বিপরীতে ১৬৬ টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসেন আলীর বিরুদ্ধে। ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) প্রকল্পের আওতায় চাল পাওয়ার কথা ছিল উপকারভোগীদের। 

ভুক্তভোগীরা জানান, স্লিপ নিয়ে পরিষদ চত্বরে আসার পর জানানো হয় চাল নেই। পরে প্রতি তিন জনের স্লিপের বিপরীতে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সে হিসেবে প্রতি জনের স্লিপের বিপরীতে ১৬৬ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এরপর তাদের স্লিপ ছিড়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

স্লিপ নিয়ে পরিষদ চত্বরে চাল নিতে আসা নাওডাঙা ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভিজিএফ কার্ড সুবিধাভোগী  সংকর কুমার বলেন, ‘তিনটা করি স্লিপ নিয়া ছিড়ি ফেলাইছে। টাকা দিছে ৫০০। তিনখান স্লিপ মিলি ৫০০ টাকা!  হামরা গরিব মানুষ, হামরা চাউল চাই।’ 

এ সময় উপস্থিত ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যানের দেওয়া ৫০০ টাকার নোট বের করে দেখান। টাকা নয়, প্রাপ্য চালের দাবি জানান তারা।

১০ কেজি চাল নিতে এসে স্লিপের বিনিময়ে ১৬৬ টাকা পাওয়া সাহের বানু বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। হামরা এই টাকা দিয়া কী করমো। হামাক চাউল নিয়া দেও। হামরা চাউল চাই।’

একই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী আমজাদ আলী বলেন, ‘স্লিপ দিছে। স্লিপ নিয়া আসি দেখি চাউল নাই। এগলা তামসা বের করছে।’

এদিকে ভিজিএফের চাল না দিয়ে টাকা দেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান হাসেন আলী পরিষদ ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

চেয়ারম্যান হাসেন আলীবিক্ষোভের খবরে ইউনিয়ন পরিষদে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ চাল না পাওয়ায় তারা পরিষদ চত্বরে অপেক্ষা করছিলেন। চেয়ারম্যান বলেছেন যে চাল ঘাটতি হয়েছে। পরে সুবিধাভোগীদের চাল দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

এদিকে চালের বিপরীতে প্রতি তিনটি স্লিপের বিনিময়ে ৫০০ টাকা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন নাওডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসেন আলী। 

তিনি বলেন, ‘চালের ঘাটতি হওয়ায় কয়েকজনকে টাকা দেওয়া হয়েছিল। পরে পিআইও সাহেব এসে চাল দেওয়ার কথা বললে টাকা ফেরত নিয়ে চাল দেওয়া হয়েছে।’

ঘাটতি হলে পরে কোথা থেকে চাল দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরে স্থানীয় পাইকারদের থেকে চাল কিনে দেওয়া হয়েছে।’

চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ হয়ে থাকলে ঘাটতি হলো কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বণ্টনের সময় হয়তো কেউ একাধিকবার নিয়ে থাকতে পারে। অনেক চালতো, একটু ভুল হতেই পারে। পরে সবাইকে চাল দেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস পিআইও’র বরাত দিয়ে বলেন, ‘আমি যতদূর জেনেছি ওই ইউনিয়নে বরাদ্দের শতভাগ চাল বিতরণ হয়েছে।’

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও স্লিপের বর্ণনা দিলে ইউএনও বলেন, ‘স্লিপ দিয়েই চাল বিতরণ করা হয়। তবে চাল না দিয়ে টাকা দেওয়া হয়ে থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’