অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যার পর লাশ পুঁতে ফেলেন বাবা, করেন মামলা

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তালুক ঈসাদ নয়াটারী গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে লিপি আকতারের মাটির নিচে পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল গত ২৫ জুলাই। এ ঘটনায় বাবা রফিকুল পীরগাছা থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলাও করেছিলেন। তবে মরদেহ উদ্ধারের আট দিন পর এই হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে।

জানা গেছে, মরদেহ উদ্ধারের আরও তিন দিন আগে বাবা নিজেই অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে হত্যা করেছেন। এরপর মরদেহ বাড়ি থেকে একটু দূরে নিয়ে পুঁতে রাখেন। সোমবার (১ আগস্ট) আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেন বাবা। আদালতের কাছে দিয়েছেন হত্যার বর্ণনা।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের এক কনস্টেবলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল লিপির। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই সংসার ভেঙে যায়। এরপর লিপি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে এবং নিজেও মাদক সেবন করা শুরু করে। এ নিয়ে গ্রামে বেশ কয়েকবার সালিশও হয়েছে—সেখানে রফিকুলকে অপমান করা হয়। এ অবস্থায় মেয়েকে ভালো করার জন্য ঢাকার সাভারে একটি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন বাবা। সেখানেও সে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। কোরবানির ঈদে লিপি বাসায় এলে বাবা জানতে পারেন তার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি জানার পর মেয়েকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।

গত ২২ জুলাই রাত ১টার দিকে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশটি বাড়ির পাশে একটি জমিতে পুঁতে রাখেন। এদিকে, হত্যার তিন দিন পর একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে উঁচু মাটি দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। লাশটি রফিকুল ইসলামের মেয়ে লিপির বলে চিহ্নিত করা হয়। এ ঘটনায় বাবা মামলা করলেও তার কর্মকাণ্ডে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পীরগাছা থানার ওসি মাসুমুর রহমান জানান, তার আচরণ ও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘটনার দিন রাতে লিপি বাসাতেই ছিলেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি পুলিশের কাছে মেয়ের বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের কথা জানান। মেয়েকে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেন। সোমবার তাকে রংপুর আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।