‘এক বিঘা জমির আখ থেকে লাভ ৭০ হাজার টাকা’

নীলফামারীতে আখ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। কম খরচে অধিক লাভজনক ও নগদ অর্থে বিক্রি হওয়ায় আখ চাষে ঝুঁকছে এই অঞ্চলের কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে ১৭০ হেক্টর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবার চাষ হয়েছে ১৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে জেলা সদরে ৩৫, ডোমারে ১৩, ডিমলায় ২, জলঢাকায় ১৫, ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে।

উঁচু জমি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকায় জেলার ডোমার উপজেলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক উৎপাদন খরচ কম ও অধিক দামে বিক্রি হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে আখ চাষির পরিমাণ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতে রোগ বালাই কম ও ফলন ভালো হয়েছে। ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে কৃষকরা মাঠেই ভালো দাম পাচ্ছেন। বিক্রেতারাও আখ ক্ষেতে চাষিদের কাছ থেকে আখ কিনে বাজারে ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

জেলার ডোমারের বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বোড়াগাড়ী গ্রামের আখ চাষি জয়নাল আবেদীন (৪৮) বলেন, প্রায় ১২ বছর থেকে আখ চাষ করছি। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি চাষ করেছি। রোগ বালাই অনেক কম হয়েছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে আখের প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। প্রতিটি বড় সাইজের আখ ১৫ থেকে ২০ টাকা, মাঝারি ও ছোট আকারের আখ ১২ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড ঈশ্বরদী ৪১, ৪২ জাতের এক বিঘা জমিতে চাষ করলে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার আখ বিক্রি করা যায়। ওই ইউনিয়নের উপেন চন্দ্র রায়, হযরত আলী একই কথা বলেন।

একই গ্রামের আখ চাষি এজার উদ্দিন (৪৫) জানান, দেড় বিঘা জমিতে হাইব্রিড ঈশ্বরদী ৪১, ৪২ জাতের আখ চাষ করতে হাল, সার, বীজ ও পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ফলনও ভাল হয়েছে, এক বিঘার আখ এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। যাবতীয় খরচ বাদে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এখনও আধা বিঘা জমির আখ কর্তন বাকি আছে। আখ চাষে আমাদের পরিবারের অভাব অনটন আর নেই, আমরা আখ চাষ করে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। অন্য ফসলের চেয়ে আখ চাষ করেও লাভবান হওয়া যায় আগে জানতাম না।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, এ উপজেলায় যে সব আখ চাষ করা হয়, সবই ঈশ্বরদী জাতের। ঈশ্বরদী ৪১, ৪২ জাতের আখ চাষের উপযোগী। ভালো ফলন হয়। অন্যান্য জাতের তুলনায় বাজারে চাহিদা বেশি থাকে, দামও ভালো পাওয়া যায়। খেতেও বেশ মিষ্টি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. বকুল ইসলাম জানান, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আখ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারে ১৩ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এক হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে। আমরা চাষিদের রোগ বালাই দূরীকরণ ও আখের  চাষ ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এসব জাতের আখ বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয় না। শুধু মুখে চিবিয়ে ও মেশিনে মাড়াই করিয়ে রস বের করে পান করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুবক্কর সিদ্দিক জানান, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আখের আবাদ হয়। এবার জেলায় ১৬০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে।