পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে ভাগ্য বদল 

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল, ভাঙা জগ, বালতি ও চেয়ার প্রক্রিয়াজাত করে ভাগ্য বদলেছেন নীলফামারীর শফিকুল ইসলাম। জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ইটাখোলা গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে ও বিসমিল্লাহ প্লাস্টিক কারখানার মালিক তিনি। পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে এই কারখানায় তৈরি হচ্ছে বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও হুইল চেয়ারের (প্যাডেল) পাদানি। পরিত্যক্ত প্লাস্টিককে প্রক্রিয়া করে স্থানীয় পর্যায়ে এমনভাবে গড়ে ওঠা আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পণ্যও দেশ-বিদেশে বিক্রি হচ্ছে। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে সুতা তৈরির কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।  

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকে ভাগ্যবদলের ঘটনার বিষয়ে শফিকুল বলেন, ২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পা অস্ত্রোপচার করার পর কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। অভাবের সংসারে একমুঠো ভাত ও ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়। টাকার অভাবে বাস্তুভিটার ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে প্রথমে হকারদের (ফেরিয়ালা) থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, জগ, বদনা, ভাঙা চেয়ার কিনে জেলার সৈয়দপুর শহরে এক মহাজনের কাছে কেজি দরে বিক্রি শুরু করি। ধীরে, ধীরে ব্যবসার উন্নতি হলে মেশিন কিনে শুরু করেন (রিসাইক্লিং) কাটিং। বর্তমানে তার কারখানায় তৈরি হচ্ছে সাইকেল-রিকশার পাদানি।

তিনি জানান, এখন তার কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার ১২ থেকে ১৫ জন মানুষের। দেশের রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও সৈয়দপুরের বাইসাইকেল শোরুমে বিক্রি হচ্ছে তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্য। তার সাফল্য দেখে এখন স্থানীয় পর্যায়ে ছোট-বড় অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে।

একই ইউনিয়নের বাদিয়ার মোড়ের নুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল কাশেম ফেরদৌস বলেন, অব্যবহৃত পানির বোতল, কোমলপানীয়ের বোতল রিসাইক্লিং করে বদনা, বালতি, জগ, পানির বোতল, চেয়ার ও রান্নার কাজে ব্যবহৃত চামচ, প্লেট, ঝাঁপি ও শিশুদের খেলনা তৈরি করা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারের আর্থিক সহযোগিতা পেলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে হাজারো মানুষের। এতে গ্রামের মানুষের বেকারত্ব দূর হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে। এসব মালামাল ঢাকার ইসলামবাগ, ভারত, চীন ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। রফতানি হওয়া পণ্য দিয়ে ভিয়েতনামে সুতা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

প্রায় ২০ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত ফেরদৌস বলেন, ‘গ্রাম ঘুরে ফেরিওলারা বুট, বাদাম, চানাচুর, আচার, সুই, সুতা ও চকলেটের বদলে পরিত্যক্ত বোতল, ও প্লাস্টিকের ভাঙা জিনিশপত্র এনে কেজি দরে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেন। আমরা এগুলো রঙ ভেদে আলাদা করে মেশিনের সাহায্যে তা কাটিং (রিসাইক্লিং) করে পাউন্ড হিসেবে দেশ ও বিদেশে বিক্রি করি। প্রক্রিয়াজাত করার পর প্রতি কেজি ৫৯ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়। এতে প্রতি মাসে গড়ে আয় হয় লক্ষাধিক টাকা। কর্মচারীর বেতন ও পরিবহন বাবদ খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে অর্ধেকেরও বেশি।

কারখানার শ্রমিক রাবেয়া বেগম (৪৫) বলেন, চার সদস্যের পরিবারে খাবার যোগাতে হয় আমাকে। স্বামী অসুস্থ, ছেলে দুইটাও ছোট, কাজ করার লোক নেই। তাই ফেরদৌসের কারখানায় কাজ করে নিয়মিত ৩০০ টাকা করে পাই। এখন সংসার ভালো চলছে। স্বামীর চিকিৎসা ও ছেলে দুটার খাবার নিয়ে ভাবতে হয় না।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিভিন্ন বোতল রিসাইক্লিং করে দেশ বিদেশের বাজারে বাজারজাত করা একটি সফল উদ্যোগ। সরকারিভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকলে এ ধরনের ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।