‘হামার একটা পাকা বাড়ি আছে’

‘জীবনটা শেষ হয়া গেলো। এক শতক জমি কিনির পাই নাই। শেখের বেটি হামাক দুই শতক জমি দিছে, ফির পাকা ঘর বানে দিছে। নামাজ পরি দোয়া করিম আল্লাহ তার ভালো করুক। এহন কবার পাইম হামার একটা পাকা বাড়ি আছে।’

বদলে যাওয়া জীবনের অনুভূতি এভাবেই প্রকাশ করলেন নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের গুড়গুড়ি মাঝাপাড়া গ্রামের হাজেরা বেগম (৫০)। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় উপহারের ঘর পেয়েছেন তিনি।

হাজেরা বলেন, ‘৪০ বছর আগোত যখন মোর বিয়াও হয়। তখন ওমরা (স্বামী) পরার জমিত ছিল। ওতে সংসার করি বয়শটা শেষ। আগোত ভাঙা ঘরোত নিন্দে না ধরে। এ্যালা একনা নিন পারির পাইম।’

একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর পেয়েছেন গুড়গুড়ি মাঝাপাড়ার বাসিন্দা নাজমা বেগম (৪০)। এখন প্রকল্পের ঘরে থাকেন। স্বামী বেলাল হোসেন ভ্যানচালক। স্বামী-স্ত্রী ও চার সন্তানসহ ছয় জন ওই ঘরেই থাকেন। ঘর পেয়ে অনেক খুশি তারা।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় উপহারের ঘর পেয়েছেন তারা

ঘর ও জমি পাওয়ার আনন্দে নাছিমা বেগম বলেন, ‘আগোত কষ্টের শেষ ছিল না। পরের জমিত থাকির নাগছিলো। পলিথিনের ছাউনি ঘরোত পানি পরছিল। এমন কষ্ট হছিল তা কওয়ায় যায় না। এখন কবার পাইছু হামার একটা পাকা বাড়ি ও জমি আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর বানে দিছে, আর কারও সাহস হইবে না, এই ঘর করি দিবার।’

হাজেরা, নাজমা ও নাছিমার মতো একই প্রকল্পের ঘর পেয়েছে ওখানের ৩৪টি পরিবার। যেখানে রয়েছে বিদ্যুৎ, গাছপালা, টিউবওয়েল, রান্নাঘর ও বাথরুম নানা সুযোগ-সুবিধা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় পাওয়া ঘরে বসবাস করছে ৩৪ পরিবার। পড়ে থাকা খাস জমি কাজে লাগিয়ে ভূমিহীন আশ্রয়হীনদের ঘর বানিয়ে দিয়েছে সরকার। এখন পুরো গ্রাম আলোকিত।

একসময়ে ভিক্ষা করতেন শাহজান বানু (১০৫)। কচুকাটা ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের অন্যের জমিতে থাকতেন। এখন উপহারের ঘরে থাকেন।

তিনি বলেন, ‘হামরা ঘর পামো জমি পামো, এটা বিশ্বাস করিবার পাই নাই। হঠাৎ একদিন উপজেলা থাকি স্যার আসি আইডি কার্ড নিলো। কইছিল তোমাক সরকার ঘর দেবে। সে কথামতো ঘরও পাইছি। এখন আর রোদ বৃষ্টির ভয় নাই। এ্যালা ঘর পায়া খুশিতে আছি।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, তৃতীয় পর্যায়ে এখানে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দে ঘরগুলো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়েও একই বরাদ্দে ঘর তৈরি করা হয়েছিল। তবে প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দে ঘর তৈরি করা হয়েছিল।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় পাওয়া ঘরে বসবাস করছে ৩৪ পরিবার

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) নীলফামারী সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছুরী গ্রামে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে সুফলভোগীর মাঝে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন নীলফামারী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। এ নিয়ে সদর উপজেলায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে ৭০৪ জনের ঠাঁই হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২০টি এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৩১০টি ও চতুর্থ পর্যায়ে ৭৫ পরিবার ঘর পেয়েছেন উপকারভোগীরা।

কচুকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী বলেন, ‘অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। যারা সুবিধাভোগী তাদের একটি টাকাও খরচ হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সদরের ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে কচুকাটা ইউনিয়নে সবচেয়ে স্বচ্ছভাবে কাজ হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৪টি ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার বলেন, ‘সদর উপজেলাকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা দিতে পারবো। চতুর্থ পর্যায়ে যে ৭৫টি ঘর নির্মাণ করা হবে, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে আগের ঘরগুলোর চেয়ে আরও ভালো মানের ঘর তৈরি করা যাবে। দ্রুত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।’