হামলার ৬ বছর: এখনও জমি ফেরত পাননি সাঁওতালরা, হয়নি হত্যার বিচার

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে হামলা-উচ্ছেদ ও হত্যা দিবসে শোক র‌্যালি এবং প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রবিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। 

এরমধ্যে নিহত তিন সাঁওতালের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে দিবসটি শুরু হয়। পরে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শতশত সাঁওতাল নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে একটি শোক র‌্যালি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে মিছিলকারীরা সবাই কাটামোড়ের সমাবেশস্থলে মিলিত হন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ডা. ফিলিমন বাস্কে। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌসসহ সাঁওতাল নেতৃবৃন্দ।

অপরদিকে, সাহেবগঞ্জ হাইস্কুল এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় আরেকটি সমাবেশ। সেখানে সাঁওতাল নেতা বার্নাবাস টুডুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম. এম আকাশসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সাঁওতালদের সঙ্গে রংপুর চিনিকলের জমি নিয়ে বিরোধ নিস্পত্তি হয়নি। এছাড়া হামলা, তিন সাঁওতাল হত্যা ও অগ্নিসংযোগসহ লুটপাটের বিচারের অগ্রগতি নেই। এই সমাবেশে থেকে সাঁওতালদের বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড স্থাপনের ঘোষণার প্রতিবাদ, হামলা-হত্যার দ্রুত বিচারসহ সাত দফা দাবি জানান বক্তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড়ে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে আঁখ কাটতে গিয়ে সাওতালদের বাঁধার মুখে পড়ে রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। দিনভর দু'পক্ষের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে চিনিকলের জমিতে গড়ে তোলা সাঁওতালদের ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু প্রাণ হারান। এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫/৬শ' জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। 

মামলাটি পরবর্তী সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পিবিআই মূল আসামিদের বাদ দিয়ে ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করে না-রাজি দেয় বাদীপক্ষ। পরে একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। সিআইডি তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। 

এদিকে, মামলার মূল আসামিদের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়ার অভিযোগ তুলে সেটিও প্রত্যাখ্যান করে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি আবারও এর বিরুদ্ধে নারাজি দেয় বাদীপক্ষ। বাদীর সর্বশেষ নারাজি পিটিশনের পর মামলাটির ওপর ১২ অক্টোবর আদালতে শুনানি ও আলোচনা হয়। শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর আদেশের দিন ধার্য হলেও এখন পর্যন্ত কোনও আদেশ বা বিচারকাজ শুরু হয়নি।