‘ব্ল্যাক রাইস’ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় ‘ব্ল্যাক রাইস’ আবাদ বেড়েছে। এটি ‘কালো ধান’ নামেও পরিচিত। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও বাজারে দাম বেশি হওয়ায় দিন দিন ‘ব্ল্যাক রাইস’ আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা।

উপজেলা শহরের নিয়ামতপুর দেওয়ানিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, নতুন জাতের এই ধান সবার নজর কাড়ছে। রোগবালাই না থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন। উচ্চ ফলনশীল এসব ধান চাষ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন দেখা যায়, অন্যান্য ধানের মতো এই ধান গাছ দেখতে সবুজ, কিন্তু ধানগুলো কালো। প্রতিটি গাছের ডগায় দুলছে কালো শিষ। িই ধান দেখতে ভিড় করেছেন এলাকার মানুষ। ‘ব্ল্যাক রাইস’ নিয়ে কৃষকের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই।

আরও পড়ুন: ব্ল্যাক রাইস চাষে বাড়ছে আগ্রহ, কেজি ৬০০ টাকা

কৃষক শফিকুল বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে একটি কোম্পানিতে কাজ করি। আমার আগ্রহ ছিল নতুন জাতের ফসল কীভাবে ফলানো যায়। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে এই কালো ধান চাষের প্রতি আগ্রহ থৈরি হয়। ওই কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি, ব্ল্যাক রাইস বাংলাদেশে আছে। সেই কর্মকর্তা একজন কৃষককে দিয়ে ব্ল্যাক রাইস ফলানোর চেষ্টা (ডেমো ট্রায়াল) করেন। কিন্ত সেই কৃষক ঠিকমতো ধান ফলাতে পারেননি। পরে তিনি আমাকে ৫০০ গ্রাম ধানের বীজ দেন। এরপর এই ধান চাষ শুরু করি। তবে তেমন একটা সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয়নি। পোকামাকড় নেই বললেই চলে।’

কালো ধানের আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা

তিনি আরও বলেন, ‘এই ধানের ফলন অন্য ধানের চেয়ে ভালো। সবাই বীজ নেওয়ার জন্য অস্থির হয়েছে। যদি বীজের ভালো দাম পাই, তাহলে এলাকার কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমার ২২ শতক জমিতে বীজসহ সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। সেখানে ছয় থেকে সাত মণ ধান হবে। এবারে বীজের জন্য সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হবে। এবারের ফলন ও দাম নির্ভর করছে পরবর্তী আবাদের ওপর।’

একই এলাকার কৃষক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই শফিকুল প্রথম ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। ধানটি দেখতে ভাল লাগছে। যদি এটা উন্নতমানের হয়, তাহলে আমরাও আবাদ করবো।’

আরেক কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শুনি, এই এলাকার এক কৃষক নতুন জাতের ধান চাষ করেছেন। এরপর খোঁজ নিয়ে জমিতে এসে দেখি ধানও খুব সুন্দর হয়েছে। ধানের শীষের গঠন ভালো, ধান দেখতেও সুন্দর। আগামী মৌসুমে আমিও এই ধান আবাদ করবো।’

সৈয়দপুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিমেষ মজুমদার জানান, ‘ব্ল্যাক রাইস বিঘাপ্রতি ১২-১৩ মণ হতে পারে। এটি আমন ধানের মতোই সার প্রয়োগ, কিটনাশক স্প্রে, পরিচর্চা ও কর্তন করতে হয়। তবে তুলনামূলকভাবে আমন ধানের চেয়ে সার, স্প্রে, পরিচর্চা সবকিছুই কম লাগে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনা বেগম বলেন, ‘সৈয়দপুরে আগাম সবজি ও বোরো ধান ভালো আবাদ হয়। এখানে শফিকুল নামে এক কৃষক ব্যক্তিগতভাবে একটি নতুন জাতের ধান—যেটিকে ব্ল্যাক রাইস বলে, সেটির বীজ সংগ্রহ করে উপজেলার দেওয়ানী পাড়ায় ২২ শতক জমিতে রোপণ করেছেন। ধানটি আমাদের নজরে আসে। তবে এই ধানে পুষ্টিগুণ বেশি থাকতে পারে। পুষ্টিগুণের বিষয়টি কিন্তু গবেষণার বিষয়। গবেষণায় যদি পাঠানো যায় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান যদি বিষয়টি নজরে আনে তাহলে হয়তো বলতে পারবে যে, ধানে পুষ্টি গুণ কতটুকু আছে। এই ধান আবাদের ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের আক্রমণসহ অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শ চাইলে অবশ্যই কৃষি বিভাগ তার পাশে থাকবে।’