কার্তিকের পর অগ্রহায়ণের অনেকগুলো দিনও চলে গেলো। এরমধ্যেই সন্ধ্যার হিমেল বাতাস, আর ভোরে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু জানান দিচ্ছে শীত চলে এসেছে। এক কথায় বলা চলে যেন দুয়ারে হাজির। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলা নীলফামারীতে লেপ-তোশকের দোকানগুলোতে বেড়েছে ভিড়। কারিগরদের দেখা গেছে ব্যস্ত সময় পার করতে। নতুন করে বানানোর পাশাপাশি অনেক কারিগর পুরনো লেপ-তোশক মেরামতেও ব্যস্ত।
প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী পৌষ ও মাঘ দুই মাস শীতকাল। তবে হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় নীলফামারীতে কার্তিকের মাঝামাঝি থেকেই শীত অনুভব হয়। জেলায় দিনের বেলায় এখন রোদ একটু না চড়তেই মিলিয়ে যাচ্ছে দুপুরে। বিকাল না গড়াতেই বইছে হিমেল বাতাস। সন্ধ্যা নামতেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে রাস্তাসহ মাঠ-ঘাট। এমন আবহাওয়া জানান দিচ্ছে শীত এবার ভালোই পড়বে।
এ অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্রেতার চাহিদামতো লেপ-তোশক তৈরি করে দোকানে বিক্রি শুরু করেছেন। শীত থেকে বাঁচতে লেপ-তোশক তৈরি করতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন দোকানে। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কারিগররাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকে ব্যস্ত পুরনো লেপ-তোশক মেরামতে।
নীলফামারী পৌর শহরের হাড়োয়া মহল্লার বাসিন্দা মাহমুদ হোসেন বলেন, তিন হাত বাই পাঁচ হাতের একটি লেপ তৈরি বাবদ খরচ পড়েছে এক হাজার ১০০ টাকা। এরমধ্যে লেপ তৈরি ৭৫০ টাকা ও সাদা কভার ৩৫০ টাকা। তিনি আরও বলেন, এবার আগাম শীত পড়তে শুরু করেছে। তাই আগেভাগেই বানিয়ে নিলাম। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফের বলেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় লেপের দামও একটু বেশি মনে হয়।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট-বড় সব দোকানে কমবেশি ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। ক্রেতারা সাধ্যমতো অর্ডার দিচ্ছেন। অর্ডার পেয়ে কারিগররাও খুশি।
রামগঞ্জ বাজারের লেপ-তোশকের কারিগর ইউনুস মিয়া বলেন, এবার আগেভাগেই শীত নামায় লেপ-তোশকের অর্ডার ভালোই পাচ্ছি। তুলা ও কাপড়ের মান অনুযায়ী দাম নেওয়া হচ্ছে। সারা বছরের তুলনায় শীতে আমাদের কাজ করতে হয় বেশি।
একই শহরের নিউ বাবুপাড়ার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, সাধ্যমতো লেপ তৈরি করে নিচ্ছি। তবে গত বছরের চেয়ে প্রতি কেজি তুলায় দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা। আর সবচেয়ে দাম হলো দেশীয় শিমুল তুলার। প্রতিকেজি ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই তুলার দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা। আর এ বছর সেই তুলার কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।
জেলা শহরের কালিবাড়ী মোড়ের ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, প্রকারভেদে লেপ-তোশক এক হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটিতে কারিগররা মজুরি পাচ্ছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। তবে এ বছর জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে শ্রমিক ও লেপ-তোশক তৈরির খরচ।
তিনি আরও বলেন, শিমুল তুলা পাইকারি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বোমা তুলা পাইকারি প্রতিকেজি ৭৫ ও খুচরা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাদা তুলা পাইকারি ৭৫ টাকা ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। গার্মেন্ট তুলা পাইকারি প্রতিকেজি ২৫ টাকা ও খুচরা ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।