সালিশে দুই নারীকে নির্যাতন, সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের কারাদণ্ড

রংপুরের বদরগঞ্জে সালিশে হাত-পা বেঁধে দুই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকসহ তিন জনকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় ছয় আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক রোকনুজ্জামান এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্তরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের পুলিশ পাহারায় কারাগারে নেওয়া হয়।

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর পিপি জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, ‌‌‘উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হক, তার সহযোগী মহুবুল ইসলাম, ও এনামুলকে (১) ১৪ বছর, এনামুলকে (২) তিন বছর এবং সাবেক ইউপি সদস্য ইলিয়াস, সেকেন্দার মন্ডল, রউফ মন্ডল মজম আলী ও বাবলুকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন বিচারক। এছাড়া ৫০ হাজার করে টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি মামলার বাকি ৪৫ আসামিকে খালাস দেন আদালত।’

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৫ জুন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর কাশিপুর লিচু বাগান এলাকায় সালিশ বৈঠকে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আয়নাল হকের নির্দেশে অন্যান্য আসামি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সেসময় সংবাদ প্রকাশ হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় মামলা করেন ভুক্তভোগী এক নারী। মামলায় আয়নাল হকসহ ৫৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলার বিচার চলাকালীন দুই আসামির মৃত্যু হয়। পরে ৫৪ আসামির বিরুদ্ধে দুই দফায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। 

তদন্ত প্রতিবেদনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪২, ১৪৭, ৩২৩, ২২৫, ১১৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু সাক্ষ্য ও জেরা এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭, দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৩৫৪ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দেন। অভিযোগপত্রে ৩৫৪ ধারা না থাকলেও সাক্ষ্য বিশ্লেষণে ওই ধারায়ও রায় দেওয়া হয়। ১৫ জনের সাক্ষ্য শেষে সাড়ে ১১ বছর পর রায় দেন বিচারক।  

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। খালাস প্রাপ্তদের বিষয়ে নথিপত্র ঘেটে আপিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘রায়ের মাধ্যমে আদালত বার্তা দিলেন, নারীদের প্রতি সহিংসতা করলে তার শাস্তি পেতে হবে।’ 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হক প্রামাণিক বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো আমরা।’

রায় শুনে খুশি হয়েছি উল্লেখ করে ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, ‘রায়ে ৯ জনের দণ্ড হয়েছে। বাকিদের খালাস দেওয়া হয়েছে। তবু আমি খুশি। দণ্ডপ্রাপ্ত এবং খালাস পাওয়া সবাই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। রায়ের পর তারা ক্ষুব্ধ হতে পারে। সেজন্য সরকারের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই।’