থানা থেকে ‘উধাও’ প্রাইভেটকার

জব্দ করা একটি প্রাইভেটকার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী থানা থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের মার্চে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর কাশিপুর গ্রামের একটি সড়কের ওপর থেকে মালিকবিহীন প্রাইভেটকারটি জব্দ করে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, টাকার বিনিময়ে প্রাইভেটকারটি কাউকে দিয়েছেন ওসি ফজলুর রহমান।

তবে ওসির দাবি, গাড়িটি জব্দ করার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল। এরপর নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্ট মালিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা সূত্রে ওসির এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ফুলবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে উত্তর কাশিপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের বাড়ির আঙিনা থেকে একটি সাদা রঙের প্রাইভেট কার জব্দ করে পুলিশ। ফুলবাড়ী থানা পুলিশের এএসআই এনামুল হকের নেতৃত্বে গাড়িটি থানায় নেওয়া হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো গ-১৫-৮৭৮২, চেচিস নং-ইই ১১১-৫০৬৭০৫২, ইঞ্জিন নং ৪ ই-২৯৩০৫৮১। গাড়িটির আনুমানিক মূল্য পাঁচ লাখ টাকা উল্লেখ করে একটি জব্দ তালিকা তৈরি করে পুলিশ।

তবে থানা সূত্রে জানা গেছে, জব্দের পর এর কোনও তথ্য আদালতকে না জানিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করেন ফুলবাড়ী থানার ওসি ফজলুর রহমান। প্রকৃত মালিক নাকি অন্য কারও কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। গাড়িটি হস্তান্তরে মোটা আঙ্কের টাকার বিনিময় হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুনিরুজ্জামান মানিক বলেন, ১৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে উত্তর কাশিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক তাকে কল করে জানান তার বাড়ির আঙিনায় কে বা কারা একটি সাদা রঙের গাড়ি ফেলে রেখে গেছে। রাত ১০টা পর্যন্ত গাড়ির মালিকের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় ফুলবাড়ী থানায় খবর দেওয়া হয়। পরে রাতে এএসআই এনামুলের নেতৃত্বে গাড়িটি থানায় নেওয়া হয়। তবে আমরা সন্দেহ করেছিলাম, গাড়িটি কোনও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হয়ে থাকতে পারে। পরে কী করা হয়েছে তা জানা নেই।

এ বিষয়ে এসআই এনামুল হক গাড়ি জব্দ করার কথা স্বীকার করেন। তবে গাড়িটির শেষ পরিণতি কী হয়েছে তা না জানিয়ে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর কয়েক দফা কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশ আইন ১৮৬১ এর ২৫ ধারা অনুযায়ী মালিকবিহীন সম্পদ জব্দ হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি তা নিজ হেফাজতে গ্রহণ করে জিডিমূলে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ মোতাবেক নিষ্পত্তি করবেন। জিডি হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনার বাইরে জব্দ করা সম্পদ হস্তান্তর বেআইনি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘আইনি বিধান মতে পরিত্যক্ত কিংবা সন্দেহজনক বা চোরাই বলে গণ্য বা কোনও অপরাধ সংশ্লিষ্ট সন্দেহে সম্পত্তি বা গাড়ি পুলিশ জব্দ করলে সঙ্গে সঙ্গে তা আইনি প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট তার হেফাজত ও অর্পণ সম্পর্কে আদেশ দেবেন। এর বাইরে থানায় বসে হস্তান্তর কিংবা অন্যকোনও পদক্ষেপ নিলে তা বেআইনি হবে।’

জিডি করার পর আদালতের অনুমতি ছাড়া জব্দ করা গাড়ি হস্তান্তর করা যায় কি না- এমন প্রশ্নে ওসির দাবি, ‘আইন মেনেই গাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে।’ তবে আইনের কোন প্রক্রিয়ায় কবে এবং কার কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করা হয়েছে তা জানাননি ওসি।

জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়িটি প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর না হয়ে থাকলে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবো।’