টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র ও স্কুল মাঠে পশুর হাট: সেই প্রধান শিক্ষককে শোকজ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। নোটিশে কেন বেতন ভাতা স্থগিত কিংবা বাতিল করা হবে না তা নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) শামসুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রবেশপত্র বিতরণ ও স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে মাউশি সূত্রে জানা গেছে।

মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক-১) মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশে তদন্ত কর্মকর্তা ও কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাট বসাতে সহযোগিতা ও অর্থ গ্রহণ করা এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র প্রদান বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি ৫২০ টাকা গ্রহণ দণ্ডনীয় অপরাধ।’

এই অবস্থায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা মোতাবেক প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বেতন-ভাতাদি কেন স্থগিত/বাতিল করা হবে না- আগামী সাত দিনের মধ্যে এর কারণ ব্যাখ্যার জন্য নির্দেশ দিয়েছে মাউশি।

ডিইও শামসুল আলম জানান, তদন্তে টাকার বিনিময়ে প্রবেশপত্র বিতরণ ও পরে টাকা ফেরত প্রদান এবং স্কুল মাঠে নিয়মিত পশুর হাট বসানোর অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। প্রধান শিক্ষক একদিকে পশুর হাট সরানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন, অন্যদিকে এক লাখ টাকা নিয়ে হাট বসাতে সম্মতি দিয়েছেন। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার লঙ্ঘন। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য লিখিত আকারে মাউশি বরাবর পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মাউশি প্রধান শিক্ষককে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে। আমি বিষয়টি ওয়েব সাইটে দেখেছি। শোকজের জবাব দিলে মাউশি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’

এর আগে, দুর্গাপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল কান্তি সরকারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রবেশপত্র বিতরণ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে স্কুল মাঠে পশুর হাট বসানো নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ এবং বাণিজ্যিক ঘরের ভাড়াসহ বিদ্যালয় নিজস্ব আয়ের প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পায় উপজেলা প্রশাসন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠান কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। 
২০২০ সালে পাঠানো ওই প্রতিবেদন গত চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ‘রহস্যজনক’ কারণে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি মাউশি কিংবা মন্ত্রণালয়।