কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নে ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির ৯০০ কার্ড দাবি করার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির এক সদস্যকে ‘বহিষ্কার’ করেছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মো. ফয়সাল আহমেদ সাগর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
তবে এই বহিষ্কারাদেশকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ। তিনি বলেছেন, ‘এ ধরণের বহিষ্কারাদেশ সাংগঠনিকভাবে নেওয়া হয়নি। সদস্য সচিব এটা করেছে কিনা তাও আমাকে জানানো হয়নি। এটা অবৈধ।’
‘বহিষ্কৃত’ সদস্যের নাম মো. রিয়াদ মিয়া। তিনি চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য। রিয়াদ এ বছর চিলমারী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত ১১ মার্চ উপজেলার থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদে আলোচনা সভা চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদ মিয়া থানাহাট ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের কাছে জোরপূর্বক ভিজিএফ কর্মসূচির ৯০০ কার্ড দাবি করেন। এ অবস্থায় প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও পরিষদ চত্বরে উপস্থিত স্থানীয় জনগণ ক্ষুব্ধ হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ‘বিষয়টি প্রকাশ হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। এ অবস্থায় চিলমারী উপজেলার সাধারণ জনগণের কাছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় মো. রিয়াদ মিয়াকে জেলা কমিটির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বহিষ্কৃত সদস্য রিয়াদ। তিনি দাবি করেছেন, তাকে বানোয়াট অভিযোগে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। সদস্য সচিব এককভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন।
রিয়াদ বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনও কার্ড দাবি করিনি। এলাকার বঞ্চিত হতদরিদ্র লোকজনকে ভিজিএফ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব আলোচনা করে আমাদের কাছে ওয়ার্ডভিত্তিক ৩৩ জন দরিদ্র ব্যক্তির নাম চেয়েছেন। জোরপূর্বক বা প্রভাব খাটানোর কোনও ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বিষয়টিকে কে বা কারা মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে উপস্থাপন করেছে। আর সদস্য সচিব এককভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংগঠনের আহ্বায়কের সাথে পরামর্শ না করে কোনও ধরণের তদন্ত কমিটি ছাড়াই তিনি একক সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করেছেন।’
‘এভাবে তদন্ত ছাড়াই বহিষ্কার করে আমার সম্মানহানি করা হয়েছে। আমি এর নিন্দা জানাই। একই সাথে নিরপেক্ষে তদন্ত দাবি করছি।’ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাখ্যান করে বলেন রিয়াদ।
এ ব্যাপারে জানতে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাইয়েদুর রহমান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) গিয়াস উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি। ফলে তাদের কারও মন্তব্য জানা যায়নি।
বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মো. ফয়সাল আহমেদ সাগরকে ফোন দিলে তিনিও রিসিভ করেননি।
জেলা কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, ‘এটা সাংগঠনিক কোনও সিদ্ধান্ত নয়। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা মুখ্য সংগঠকের মাধ্যমে আহ্বায়কের কাছে আসতে হবে। তারপর তদন্ত করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু এই বহিষ্কারাদেশ কীভাবে এসেছে এটা আমরা জানি না। সদস্য সচিব আমার কিংবা অন্য কারও সাথে আলোচনা করেননি। এই আদেশ অবৈধ। তাকে (সদস্য সচিব) আমরা ফোনেও পাচ্ছি না।’
ভিজিএফ কর্মসূচির কার্ড দাবি প্রশ্নে নাহিদ বলেন, ‘আমরা কোথাও কার্ড দাবি করছি না। আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ভিজিএফের তালিকা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। সামর্থ্যবান অনেককে দলীয় বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমরা সেগুলো বাদ দিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্রদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। এখানে কার্ড দাবি করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিষয়টি নেতিবাচকভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’