রংপুরে যৌতুকের টাকার জন্য এক গৃহবধূর শরীরে আগুন দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সকালে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
নিহত গৃহবধূর নাম রেজওয়ানা দিল আফরোজ (২২)। তিনি রংপুরের হারাগাছ থানার মধ্য কাচু বকুলতলার রেজাউল করিমের মেয়ে। গৃহবধূর বাবার অভিযোগ, যৌতুক না দেওয়ায় তার মেয়ের শরীরে আগুন দেন জামাতা। মেয়ের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। লাশ বাড়িতে রেখে এখন থানায় থানায় ধরনা দিচ্ছেন। তবে ১২ ঘণ্টা পর পুলিশ বলছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন।
রেজাউল করিম জানান, তার মেয়ে রেজওয়ানার সঙ্গে রংপুরের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সরেয়ার তলের আব্দুল করিমের তিন বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে জামাতা যৌতুক দাবি করে আসছেন। ৮ জুন বিকালে তাকে হত্যার জন্য জামাতা ঘরের দরজা বন্ধ করে মেয়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিলে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় নিতে বলেন। চার দিন চিকিৎসাধীন থেকে শুক্রবার সকালে মৃত্যু হয়।
রেজাউলের অভিযোগ, ঘটনার দিন তিনি জামাতার বাড়িতে ছিলেন। জামাতা একটি ট্রাক কিনেছিলেন। এজন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ঘরের দরজা বন্ধ করে মেয়ের শরীরে আগুন দেন।
রেজওয়ানার মামা হেলাল মিয়া অভিযোগ করেন, শুক্রবার রাত ১২টায় অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে আসার সময় নগরের মাহিগঞ্জ থানা থেকে ফোন করে লাশ থানায় নিয়ে আসতে বলা হয়। লাশের অ্যাম্বুলেন্সে অভিযুক্ত আব্দুল করিম, তার বোন পারভীন ও ভগ্নিপতি ফখরুলকে তারা পুলিশে দিলে থানা পুলিশ পারভীন ও ফখরুলকে ছেড়ে দেয়। পরে তারা দুজনকে থানার সামনে থেকে আটকে আবার পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করছিল। পরে তারা লাশ নিয়ে থানায় অবস্থান করলে পুলিশ অভিযোগ নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায়। এ আশ্বাসে লাশ বাড়িতে নিলেও আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। মামলা না নেওয়া পর্যন্ত তারা লাশ দাফন করবেন না।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে মাহিগঞ্জ থানায় দিয়ে দেখা যায়, নিহতের স্বজনরা থানার সামনে অপেক্ষা করছেন। নিহত রেজওয়ানার চাচা মুকুল মিয়া অভিযোগ করেন, তার ভাতিজি মারা যাওয়ার খবর পেয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে তিনি থানায় আসেন। ওসির সাক্ষাৎ না পেয়ে ফোন করলে ওসি জানান, ভাতিজি আত্মহত্যা করেছেন, তারা মামলা নিতে পারবেন না। তাদেরকে আদালতে মামলা করতে বলেন ওসি।
তবে মাহিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এজাহারে বাদীর ঠিকানায় ভুল ছিল। সে কারণে মামলা নিতে দেরি হচ্ছে।
রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মারুফ আহমেদ জানান, তিনি ঘটনা জানতে পেরে সকালে থানায় যান। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক তিন জনকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মারুফ আহমেদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।